Image description

মাসুম খলিলী

 

আগস্ট ২০২৫-এ সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনের প্রাক্কালে চীন ও ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব এক বৈঠকে মিলিত হন। দীর্ঘকালীন সীমান্ত উত্তেজনা, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা এবং বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ সম্মেলনের আগে তিয়ানজিনে এই বৈঠক করেন। বৈঠককালে, রাষ্ট্রপতি শি বলেন, ‘ড্রাগন ও হাতির সমবায়মূলক পদক্ষেপ’ দুই দেশের জন্য সঠিক পছন্দ হওয়া উচিত।

বৈঠকের মূল এজেন্ডা ও সম্ভাব্য প্রভাব
দুই নেতার বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল- প্রথমত, লাদাখ ও অরুনাচল প্রদেশ এলাকায় সীমান্তে সংঘর্ষ এড়িয়ে স্থিতি আনতে আস্থা স্থাপনের উদ্যোগ পুনর্বহাল। দ্বিতীয়ত, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অংশ হিসাবে শুল্ক-অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা কমানো, সরবরাহ চেনে গতি আনতে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা। তৃতীয়ত, এসসিও ও ব্রিকসের মতো প্ল্যাটফর্মে সমন্বিত ভূমিকা পালন। বিশেষত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা। জ্বালানি ও জলবায়ু সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা। চতুর্থত, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বনাম চীনা বিআরআই উদ্যোগে ভারতের অবস্থান নির্ধারণ। উল্লিখিত প্রতিটি এজেন্ডা দুই দেশের এবং একই সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।

এসব এজেন্ডা সফল হলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হতে পারে। অর্থনৈতিক স্বার্থ উভয় দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারে। আর আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে, বিশেষত নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে। এসসিও ও ব্রিকসে চীন-ভারত সমন্বয় হলে রাশিয়া-চীন ব্লক আরো শক্তিশালী হবে।

 

স্বাভাবিকভাবেই ভূরাজনীতিতে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব দেখা যেতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ও কোয়াড জোটে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। চীন-ভারত সমঝোতা আংশিক হলেও তা বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ, ভারত যেন চীনের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ না হয়- এমন চাপ বাড়তে পারে। তবে রাশিয়া এটিকে স্বাগত জানাবে; কারণ এতে পশ্চিমবিরোধী ভারসাম্য জোরদার হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীন-ভারতের এই শীর্ষ বৈঠক নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানাবে। বলয়টি এর ফলে সৃষ্টব্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে স্বাগত জানালেও ভূরাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে দ্বিধা জানাতে পারে। দক্ষিণ এশিয়া ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো চীন-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে দুই শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘ব্যালান্সিং স্পেস’ পেতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
জওয়াহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অরবিন্দ ইয়েলেরি চীনা সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, মোদির চীন সফর অবশ্যই একটি বড় অগ্রগতি। যখনই উভয় দেশের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন, দীর্ঘস্থায়ী ধারণা তৈরি এবং ভবিষ্যতের সম্পর্ক গঠনে গতি এসেছে। গত বছর রাশিয়ার কাজানে তাদের বৈঠকই ভারত ও চীনকে বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধানে আগ্রহী করেছিল। মোদির বর্তমান সফরে এর পরিধি আরো বিস্তৃত এবং আকাক্সক্ষা আরো বিস্তৃত হবে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাকে আতিথ্য দিচ্ছে, যা ভারতের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিশ্বায়িত সম্পর্কের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত করবে।

ইয়েলেরির মতে, ভারত ও চীন উভয়েরই জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগের একটি প্রাণবন্ত ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্প, সঙ্গীত, শিক্ষা এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্র ও পর্যটন খাত। উভয়পক্ষের পর্যটকরা রুটগুলো দ্রুত খোলার অপেক্ষা করছেন।

চীন ও ভারতের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার প্রসঙ্গে ইয়েলেরি মনে করেন, ভারত বিশ্ববাজারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারতের মতো রূপান্তরিত অর্থনীতির জন্য সবুজ প্রযুক্তি এবং শিল্প যন্ত্রপাতি, চীনা বাজার খেলোয়াড়দের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার ওপর চীনা বাজারে ভারতের সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় অর্থনীতি যদি বিশ্ববাজারে সম্মিলিত স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে চায় তবে যৌথ সম্পৃক্ততার সুযোগ নেয়া এবং ন্যায্য অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ।

সীমান্ত বিরোধ নিরসন প্রশ্নে ইয়েলেরি বলেন, পরামর্শ ও সমন্বয়ের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা আরো বাস্তবসম্মত সংলাপ সহজ করে তুলেছে। মোদির চীন সফরের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রতিনিধিদের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতের জন্য, আলোচনার সাফল্যের অর্থ হলো উভয়পক্ষই সীমান্ত বিরোধ এবং অন্যান্য বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে তাদের উদ্বেগ ভাগ করে নিতে পারে। অতএব, বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠকের প্রতিটি রাউন্ড কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী পদক্ষেপের সাথে শেষ হওয়া অপরিহার্য।

ব্রিকস এবং অন্যান্য বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে চীন ভারতের সহযোগিতা বাড়ানো প্রশ্নে ইয়েলেরি মনে করেন, বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির স্থিতিস্থাপকতা নির্ভর করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির কর্মক্ষমতা এবং গ্লোবাল সাউথের ছোট অর্থনীতির দ্বারা পরিচালিত সহায়ক ভূমিকার ওপর। বহুপক্ষীয় গ্লোবাল সাউথ সহযোগিতা পরিচালনায় এই অর্থনীতিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারত এবং চীন ব্রিকস, এআইআইবি এবং এনডিবি-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের মূল অংশীদার। গ্লোবাল সাউথের উত্থানের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহযোগিতার পাশাপাশি, সমতা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি দেশের সমান খেলার ক্ষেত্র রয়েছে। পরিচালনা, বাজার প্রাপ্তি ও সম্প্রসারণ এবং অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সম্পর্কে ভারত ও চীনের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সফলভাবে মোকাবেলা করা হলে এই পার্থক্যগুলো বৃহত্তর ঐকমত্যের পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের শুল্কবিরোধ চীনের প্রতি ভারতের নীতিকে কতটা প্রভাবিত করছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে ইয়েলেরি বলেন, মার্কিন শুল্ক কেবল ভারতের জন্যই নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ, অংশীদার ও মিত্রদের জন্যও। বর্তমান সরকারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু সময়ের জন্য ধীরে ধীরে তার ভারত নীতির পরিধি সঙ্কুচিত করছে। চীনের সাথে ভারতের সম্পৃক্ততা ধারাবাহিক এবং ক্রমবর্ধমান; আইএনএ-ও সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়। উভয়পক্ষ বারবার আলোচনার মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছে।

 

দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে প্রভাব
চীন-ভারত সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার বর্তমান উদ্যোগে ওয়াশিংটনের কৌশলগত প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারতের ওপর চাপ কমিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রণোদনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বাড়াতে পারে। অন্য দিকে দিল্লি যদি বেইজিংয়ের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে ওয়াশিংটন কোয়াড বা ইন্দো-প্যাসিফিক কাঠামোয় জাপান-অস্ট্রেলিয়া-ভিয়েতনামকে বেশি প্রাধান্য দিতে পারে। ওয়াশিংটনের নীতিতে উপেক্ষিত হতে পারে দিল্লি।

চীন-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে সম্ভব, ভারত-মার্কিন কৌশলগত অক্ষের পুনর্বিন্যাস হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র গত এক দশকে ভারতের সাথে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ ও কোয়াড জোটে বিনিয়োগ করেছে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। চীন-ভারত ঘনিষ্ঠতা হলে, ভারতকে নির্ভরযোগ্য কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হতে পারে।

ঐতিহ্যগতভাবে ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বাধীনতার নীতি অনুসরণ করে ভারত। চীনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ভারত ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা শুধু মার্কিন অক্ষের ওপর নির্ভরশীল নয়। বাড়তি ট্যারিফ আরোপের চাপের মুখে দিল্লি যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিতে চায়, তারা চাইলে ওয়াশিংটনের চাপ ছাড়াই চীনের সাথে সম্পর্ক মেরামত করতে পারে।

এর ফলে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতে ওয়াশিংটনের দ্বিধা সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভারতকে চীনের বিকল্প উৎপাদন হাব ও প্রযুক্তি-চিপ সাপ্লাই চেনে অংশীদার হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। যদি ভারত চীনের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ায় তাহলে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে।

সীমান্ত ও নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপরও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। লাদাখ ও সীমান্ত ইস্যুতে চীনের সাথে আপস হলে ভারতকে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর কম নির্ভরশীল হতে হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ‘কম নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা গ্রাহক’ হিসেবে ভাবতে বাধ্য হবে।

দিল্লির নীতি প্রণেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিকে আরো বেশি সহযোগিতা অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করছে, যেমনটি ভারত-চীন সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন দুর্বলতায় ভুগছে যা দেশটিকে অস্থিরতার দিকে চালিত করছে। অস্থিরতা ও সঙ্কট হলো বৈশ্বিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক পুনর্নির্মাণের মূল কারণ। এই দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার পুনর্গঠনে মার্কিন শুল্কের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

 

সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে
চীন ভারত নতুন মেরুকরণে নানা ধরনের দৃশ্যপট দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক দৃশ্যপটে দেখা যেতে পারে, ভারত চীনের সাথে সঙ্ঘাত কমিয়েছে কিন্তু মার্কিন সম্পর্ক বজায় রেখে ‘দুই দিকেই খোলা দরজা’ নীতি চালাচ্ছে। এটিই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য হলো- সব বলয়ের সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এটি বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে।

এর বাইরে আরেকটি দৃশ্যপট হতে পারে ভারতের চীনমুখী হওয়া। এই সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ভারতের দীর্ঘকালীন মিত্র রাশিয়া এমনটিই চাইছে। ব্রিকস ও এসসিওতে তিন দেশের প্রধান ভূমিকা পালনে সেটি সহজ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সীমান্ত ইস্যুতে সমাধান হলে ভারত চীনের সাথে বড় অর্থনৈতিক ব্লকে যুক্ত হতে পারে, যা ওয়াশিংটনের জন্য হবে অস্বস্তিকর।

তৃতীয় আরেকটি দৃশ্য হতে পারে- ভারতের আবারো মার্কিনমুখী হওয়া। অতীতে চীনের সাথে দূরত্ব মেটানোর বিভিন্ন উদ্যোগের পর এটি দেখা গেছে। যদি চীন-ভারত বৈঠক প্রত্যাশিত সাফল্য না আনে, তবে ভারত আবারো মার্কিন অক্ষকে শক্তিশালীভাবে আঁকড়ে ধরবে। আর ভারতে মোদি শাসনে যে অস্থিরতা (আরএসএস-বিজেপি দূরত্ব; এনডিএ শরিকদের সাথে বিজেপির দূরত্ব ইত্যাদি) বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তাতে বিজেপি সরকারের পতন অসম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নতুন শাসন আবারো ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হতে পারে।

চীন-ভারত শীর্ষ বৈঠক দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের কতটা সরাসরি ক্ষতি করবে তা দেখতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতার সঙ্কেত যা ওয়াশিংটনকে নতুনভাবে ক‚টনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল সাজাতে বাধ্য করার জন্য নেয়া বলে মনে হয়। এ ধরনের চাপ যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পর্ক মেরামতে যেমন উদ্যোগী করতে পারে, তেমনি বিপরীতটিও করতে পারে।

 

বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্য
বাংলাদেশের জন্য বর্তমান চীন-ভারত সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা কমলে ঢাকার জন্য আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রকল্পে (বিসিআইএম, বিবিআইএন) অংশগ্রহণের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর ভারত-চীন প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশকে ক‚টনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তিস্তা ও আঞ্চলিক পানি বণ্টন ইস্যুতেও পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।

স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জ্বালানি, অর্থ ও স্থায়িত্বের বিশ্বব্যাপী সঙ্কট এসসিওর কর্মক্ষমতার সাথে এবং একইভাবে বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলোর সাথেও সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। চীন এসসিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি ও অংশীদার। এ বিষয়গুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকার কারণে চীন বিশ্বব্যাপী খেলোয়াড়দের কাছে প্রত্যাশা আকর্ষণ করে। ভারত এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এ, যেখানে উভয় দেশই একটি অভিন্ন এজেন্ডা ভাগ করে নেয়।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত-চীন উভয়ের সাথে সম্পর্ক জোরদার রেখে সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশল নেয়ার কথা ভাবতে পারে। সেটি হলে বাংলাদেশ বিমসটেক বিবিআইএন ও বিসিআইএম কনসোর্টিয়ামে সক্রিয় ভূমিকা বাড়াতে পারে। মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে না গিয়ে ঢাকা ইস্যুভিত্তিক সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে পারে। একই সাথে ট্যাক-২ ক‚টনীতির অংশ হিসেবে গবেষণা, ব্যবসায়ী ফোরাম ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক সেতুবন্ধন জোরদার করতে পারে। তবে ঢাকার জন্য এটি খুব সহজ হবে না।

সাম্প্রতিক চীন-ভারত বৈঠক সরাসরি সীমান্ত সঙ্ঘাত সমাধান না করলেও আঞ্চলিক শান্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছে। তবে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যের কারণে এ সহযোগিতা আংশিক ও কৌশলগত হবে। বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই বিদ্যমান। বিশেষত ৫ আগস্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদী প্রভাব থেকে মুক্ত হতে চায়। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই দেশেরই সহযোগিতা আশা করে। চীন-ভারতের নতুন মেরুকরণে দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্য পরিবর্তন হলে এর প্রভাব বাংলাদেশ চাইলেও এড়াতে পারবে না। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি বা নির্বাচন প্রস্তুতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।