
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের। জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সরব ছিল জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোও। সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় আপাতত স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিএনপি প্রথম থেকেই আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে এগিয়েছে। তবে দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য সবার আগে ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। স্থানীয় নির্বাচন নিয়েও সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে দলটি। অন্য দল থেকে একধাপ এগিয়ে এরই মধ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্যও প্রার্থী ঘোষণা শুরু করেছে।
জামায়াতের একাধিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রার্থী দিচ্ছেন তারা। এর মাধ্যমে নির্বাচনের আগে তাদের প্রার্থীদের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় সরকারের জন্য মনোনীত প্রার্থীরাও নিজেদের তুলে ধরছেন।
উভয় নির্বাচন নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে জোর দিচ্ছি।- নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে জামায়াত ঘোষিত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা ছাইফ উল্লাহ
উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনে প্রস্তুতি বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকছেন। এগিয়ে থাকছেন অন্য দলের চেয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন জামায়াতের পুরোনো দাবি। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে এর আগে স্থানীয় নির্বাচন প্রায় অসম্ভব। তবে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু জায়গায় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রার্থী পরিবর্তন হলেও এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে দুটিরই প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আইয়ুব হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাজেদা বেগমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া নড়াইল পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মো. হেমায়েতুল হক হিমু ও লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে জামিরুল ইসলাম টুটুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া এ জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে জেলা জামায়াত।
এর মধ্যে সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাইফুল আবদার, আওড়িয়া ইউনিয়নে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক হাফেজ মিরাজুল ইসলাম, লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নে জামায়াত নেতা নাহিদ জামাল, নলদী ইউনিয়নে জামায়াত নেতা মো. আবুল বাশারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। সম্প্রতি এ উপজেলার ২ নম্বর রামনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হুমায়ুন কবির সুমনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আমাদের দাবি ছিল। কিন্তু সেটা তো মনে হয় সম্ভব হবে না। আগে জাতীয় নির্বাচনই হবে। বিগত দুই মাস ধরে আমাদের জেলা-উপজেলার নেতারা প্রায় সব ইউনিয়নে প্রার্থী ঘোষণা করছেন। তবে এটা চূড়ান্ত নাও হতে পারে। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’
স্থানীয় নির্বাচন হলে তো জাতীয় কোনো পরিবর্তন হবে না। এখন নির্বাচনের মাঠ কে গোছালো, আর কে গোছালো না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সারাদেশে কাজ চলমান। আমরা আমাদের মতো করে জনগণের দাবি নিয়েই এগোচ্ছি।- জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) সংসদীয় আসনে জামায়াত ঘোষিত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা ছাইফ উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘উভয় নির্বাচন নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে জোর দিচ্ছি। চাটখিল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন আমাদের উপজেলা আমির মাওলানা মহিউদ্দীন আল হাসান। সামনের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন আশা করি।’
একই ভাবে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপজেলার ১ নম্বর কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির শারাফাত হোসেন সাহিদকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার ২ নম্বর নওগাঁ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাওলানা মুখলেছুর রহমান, ৩ নম্বর ভাদুর ইউনিয়নে মো. ইমরান হোসেন, ৮ নম্বর করপাড়া ইউনিয়নে মাস্টার ফয়সাল আহমাদকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে জামায়াত।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে ১ নম্বর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি রেদোয়ান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ওপর নানান নির্যাতন হামলা চালিয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি ১৫ বছর। তাই আমাদের স্থানীয় নির্বাচনেরও প্রস্তুতি চলছে সমানতালে। সবাই সেবামূলক ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জামায়াতের মধ্যে পদ নিয়ে লোভ ও সিন্ডিকেট না থাকায় সুষ্ঠুভাবে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি আমরা জুলাইয়ের পর থেকে করে যাচ্ছি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন হলে, বোঝা যেত জাতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতি কী হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় জনগণেরও দাবি ছিল এই নির্বাচন নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন হলে তো জাতীয় কোনো পরিবর্তন হবে না। এখন নির্বাচনের মাঠ কে গোছালো, আর কে গোছালো না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সারাদেশে কাজ চলমান। আমরা আমাদের মতো করে জনগণের দাবি নিয়েই এগোচ্ছি।’