
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার দিনভর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দুই নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকা থেকে রেলগেট পর্যন্ত এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র এবং লাঠিসোঁঠা নিয়ে হামলা চালানো হয়। গ্রামবাসীর সঙ্গে মুখোশ দিয়ে মুখ ঢেকে এবং হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে ছাত্রদের নির্মমভাবে পেটানো হয়। রাতে এবং দিনে হামলার সময় গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে অনেককে পেটানো হয়। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে এবং ধানখেতে লুকানো শিক্ষার্থীদের বের করে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানোর ঘটনাও ঘটেছে। তিনতলা বাড়ির ছাদ থেকে ছাত্রদের ফেলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী ও এলাকাবসীকে বুঝিয়ে শান্ত করার জন্য চবির উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা এগিয়ে যান। কিন্তু এলাকার কিছু লোক তাদের ওপরও হামলা করে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের একে একে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
এ ঘটনার পর রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আজকের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় চবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় রোববার দুপুর ২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন ১৪৪ ধারা জারি করেন। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির গাড়ি এলে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রোববার দুপুরে চবির মেডিকেল সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা, সব বড় বড় ক্যাডার এখানে ঢুকে হেলমেট পরে আমাদের শিক্ষার্থীদের মেরেছে। পুলিশ নেই, কোনো কিছু নেই। আমরা জিওসির সঙ্গে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘণ্টা পরও এখানে কেউ আসেননি। তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের কারা এ হামলায় জড়িত, কাউকে চিনেন কি না-এ প্রসঙ্গে যুগান্তর জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কারও নাম বলেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে চবি কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা নানাভাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাব তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান। শিক্ষার্থীদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেননি। প্রশাসনের এ রহস্যজনক নির্লিপ্ততা ও অসহযোগিতার কারণেই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অকাতরে মার খেয়ে যেতে হয়েছে বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : চবির দুই নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাসরত এক ছাত্রী শনিবার রাত ১১টার দিকে বাসায় ফেরেন। বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় দারোয়ান তাকে বাসায় ঢুকতে বাধা দেন এবং একপর্যায়ে মারধর করেন বলে বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর। খবর পেয়ে ক্যাম্পাস থেকে কিছু ছাত্র এসে ওই দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কিছু ছাত্র উত্তেজিত হয়ে দুই নম্বর গেট এলাকায় জড়ো হন। একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিষয়টি সুরাহাও হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সুরাহা হওয়ার পরও অতি উৎসাহী কিছু শিক্ষার্থী দল বেঁধে চবিসংলগ্ন দুই নম্বর গেটের মার্কেট, জোবরা গ্রামের দোকানপাট, বাড়ির জানালাসহ নানা স্থাপনা ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার পর মসজিদের মাইকে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করা হচ্ছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণা শুনে মধ্যরাতে (দেড়টার দিকে) দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী মাথায় হেলমেট এবং মুখোশ দিয়ে মুখ ঢেকে হামলায় অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনামাফিক হামলা করে। এর আগে ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফেরার সম্ভাব্য সব পথ এবং অলিগলিতে পাহারা বসায়। গভীর রাতে সেখান দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যারা বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, তাদের পেটানো হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে আসে। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিন্তু সকালের পর থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়ার পাশাপাশি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে উভয় পক্ষ।
রোববার বেলা ১১টা থেকেও অন্তত চার দফা সংঘর্ষ হয়। দেখা যায়, গ্রামবাসী দা, ছুরি, কিরিচ ও রামদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। ধানখেত, বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি কোপায় স্থানীয়রা। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে তিনতলা ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার মতো নির্মম ঘটনাও ঘটে। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী দুই পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটি করতে গিয়ে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরও গ্রামবাসীর হামলায় গুরুতর আহত হন। তবে এরই মধ্যে সতীর্থ শিক্ষার্থীরা আহত ও রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের একে একে উদ্ধার করে চবির হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালে পাঠান।
পুলিশ-প্রশাসনের নীরব ভূমিকা : এ ঘটনার শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসেও অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাঁচানো ও রক্ষার আহ্বান জানালেও প্রশাসন তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। রোববার উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। এত বড় ঘটনার পরও পুলিশ প্রশাসন কেন ঘটনাস্থলে যায়নি সে বিষয়ে জানতে চাইলে হাটাহাজারী মডেল থানার ওসি আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে আমরা কাজ করছি। তিনি এর বেশি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আহত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী : এই ঘটনায় ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন চবি উপ-উপাচার্য। তবে চমেক হাসপাতাল ও চবি হাসপাতাল সূত্র ও উদ্ধারকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৫১ জন ভর্তি আছেন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। অনেকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজিউর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেয় স্থানীয়রা। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এক শিক্ষার্থীকে রামদা দিয়ে আঘাতের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ক্যাম্পাসের বাইরের বাসা ও মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের ঘরে ঢুকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
১৪৪ ধারা জারি : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জনসাধারণের জীবন, সম্পদ রক্ষা ও শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে রোববার দুপুর ২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারার আদেশ করা হয়। এ সময় উল্লিখিত এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সব ধরনের দেশি অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে আদেশে বলা হয়। এই আদেশ জারির পর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘটনাস্থলে এলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। কেন তারা শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে এলেন না সে বিষয়ে কৈফিয়ত চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত : রোববার ক্লাস চললেও সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোববার ও সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বাগছাসের উসকানির অভিযোগ : ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ঘটনা মিটমাট হয়ে যাওয়ার পর শনিবার রাতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কয়েকজন নেতা ছাত্রদের উসকানি দিয়ে স্থানীয়দের ওপর চড়াও হয়। ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ফেসবুক লাইভে বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে সমঝোতা করে যখন চলে আসছিলাম, ঠিক তখনই বাগছাসের অতি উৎসাহী কিছু নেতার উসকানিতে ছাত্ররা ইট মারতে শুরু করে। পরে গ্রামবাসী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে চবি বাগছাসের আহ্বায়ক মুনতাসীর মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘পরিস্থিতিটাই এমন ছিল। কেউ উত্তেজিত ছিল, কেউ ম্যাচিউর আচরণ দেখিয়েছে। সব পরিস্থিতিতে সবাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তবে একপাক্ষিকভাবে একটা দলের ওপর অভিযোগ দেওয়া অনুচিত।
তালা ভেঙে নিরাপত্তা দপ্তরের রামদা নিল শিক্ষার্থীরা : রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চবির নিরাপত্তা দপ্তর থেকে শতাধিক রামদা, কিরিচ নিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে না আসায় আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যাওয়ার জন্য এসব দেশীয় অস্ত্র নেয় দাবি শিক্ষার্থীদের। নিরাপত্তা দপ্তরের সুপারভাইজার নূরউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, উপ-উপাচার্য কামাল স্যার, নিরাপত্তা প্রধানসহ আমরা তাদের অনেক বুঝিয়েছি। তবুও অনেকে না বুঝে তালা ভেঙে এগুলো নিয়ে গেছে। ৫ আগস্টের পর হল তল্লাশি করে ছাত্রলীগের ফেলে যাওয়া এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিস্থিতি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ৫১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে আহতদের দফায় দফায় হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতরা হলেন-তারেক (২৩), সিয়াম (২১), জিসান (২৩), জুয়েল (২৫), আহসান (২২), আইনুল (২১), আলাউদ্দিন (২৪), নাফিজ (২০), হাবিব (২৬), হুজাইফা (২৪), পিয়াল (২৩), মো. জামি (২২), তোফায়েল (২২), সাকিব (২৩), কাসেম (২২), তাহসিন হাবিব (২০), নাসিম (২১), আহসান (১৯), মাজিদুল (২২), আলী আকরাম (২৫), হাসান (২৩), আইনুল হক (২১), মিনহাজ (২১), তাজিম (২২), মিজানুর রহমান (২৩), তুষার (২০), সাদিক (২১), মেহেদী হাসান (২০), তোফায়েল (২০), কাসেম (২০), সাদেক (২০), শিশির (২৫), আকরাম (২৫), নাজমুল (২৩), শামসুর রহমান (২৪), আজমত (২২), তাওহীদ (২৩), মাহবুব (২১), বাহার (২২), আজমত (২৩), রাজন (২৩), সাকিব (২২), নাজমুল হাসান (২৩), শাহ আলম (২৩), আজিম (২১), মামুন (২২), সাজিদ (২৫), মাহমুদুল (২৩), আনন্দ (২৪), অন্তর (২৪) ও নিশাদ (২০)। এর মধ্যে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মামুনকে চমেক হাসপাতাল থেকে নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে দফায় দফায় আহতদের নিয়ে চমেক হাসপাতালে আসেন শিক্ষার্থীরা। এদের কারও মাথায় জখম, কারও শরীর রক্তাক্ত, কেউ হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে চবির মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে গুরুতর আহতদের চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস, অ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহতদের কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের সহপাঠীরা। এছাড়া দুজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজিব। চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, সকাল থেকে দফায় দফায় চবিতে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের জরুরি বিভাগে আনা হয়। চিকিৎসক তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৫১ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, চবি শিক্ষার্থীরা মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম হয়েছে। তাদের হাসপাতালের ২, ২৬ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাই আশঙ্কামুক্ত।
চবিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি, জাবি ও ইবিতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাবি : সন্ধ্যায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ (টিএসসি) থেকে ঢাবি শাখা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে রোকেয়া হলসংলগ্ন যাত্রী ছাউনির পাশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো রক্ত ঝরতে দেব না।
জাবি : বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক (ডেইরি গেট) এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য-সচিব আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি একটি গোষ্ঠীর যে ক্ষোভ জমে আছে, এ হামলা তারই বহিঃপ্রকাশ। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হামলা চলছে তার দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারের।
ইবি : সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বটতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচারে সরকারকে তারা ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।