Image description
টার্গেট দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি পরিচালিত হচ্ছে দিল্লি থেকে, নতুন দায়িত্বে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির বিরুদ্ধে একের পর এক সাইবার আক্রমণের পেছনে কাজ করছে আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (সিআরআই)। আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শীর্ষ রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা ও সামরিক-বেসামরিক আমলাসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দিয়ে তৈরি ভিডিও ক্লিপ, বেনামি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে সিআরআই এক ধরনের সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এক কথায়, জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসাবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি, যা এখন পরিচালিত হচ্ছে ভারত থেকে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানত তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে এই মুহূর্তে কাজ করছে সিআরআই। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। দ্বিতীয়ত, যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুল করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরুদ্ধে জনমত তৈরিসহ গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরিয়ে আনা। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের শুরুতে সরকার গঠনের পর ২০১০ সালে সিআরআই’র কার্যক্রম শুরু হয়। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছিল প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা। কিন্তু বাস্তবে গোপনে নানা জায়গা থেকে পরিচালিত হতো সিআরআই’র কার্যক্রম।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন দিল্লিতে। শেখ হাসিনার পথ ধরে দলটির বহু নেতা, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্যদের বেশির ভাগই দেশ ছাড়েন। এ কারণে সিআরআই’র কার্যক্রমও অনেকটা মুখথুবড়ে পড়ে।

জানা গেছে, ক্ষমতা হারানোর প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে উঠে গত তিন মাস থেকে ফের সক্রিয় হয়েছে সিআরআই। তবে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা ও কাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে দীর্ঘদিন সিআরআই’র মূল দায়িত্বে ছিলেন এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়াও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ শেখ পরিবারের একাধিক সদস্য প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডে রয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের গুজব তৈরির কারখানা হিসাবে খ্যাত সিআরআই’র দায়িত্ব এখন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে। নয়াদিল্লির অভিজাত এলাকা লুটিয়েন্স বাংলো জোনের কাছেই একটি দোতলা ভবনকে কার্যালয় বানিয়ে তিনি এখন এই প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই লুটিয়েন্স বাংলো জোনেরই একটি বাড়িতে বসবাস করছেন তার মা পতিত স্বৈরাচার ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় আইনগতভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পক্ষে এখন অফিশিয়ালি সিআরআই’র দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এ কারণে শেখ হাসিনার নির্দেশে জয়কে সরিয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সিআরআই’র নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুতুল নিয়মিত এই কার্যালয়ে অফিস করছেন। এখান থেকেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সিআরআই’র কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এর আগে গত ১১ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক পদ থেকে সায়মা ওয়াজেদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করে। পুতুল আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের গবেষণা, তথ্য কার্যক্রম পরিচালনা, নীতিনির্ধারণ, প্রচার-প্রচারণার কাজের কথা বলা হলেও আদতে সিআরআই এখন ভিন্ন কাজ করছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিস্ট যাদের বলা হয়, তাদের সংগঠিত করে কাজে লাগানোর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এজন্য এ তালিকার টকশোর জনপ্রিয় মুখ, সিনিয়র সাংবাদিক, ইউটিউবার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বুদ্ধিজীবীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সিআরআই’র দিল্লির এই কার্যালয় থেকেই এসব ছদ্মবেশী কালচারাল ফ্যাসিস্টদের নানা কৌশলে কাজে লাগাতে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড় করানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত করার নামে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী কালচারাল শক্তিকে জড়ো করা, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে চরম প্রতিপক্ষ হিসাবে সঙ্ঘাত সংঘর্ষে জড়ানো এবং সর্বোপরি, সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে বড় ধরনের সঙ্ঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশকে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব শক্তিকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। সবশেষে সুযোগ বুঝে একসঙ্গে কমপক্ষে ২০ লাখ কর্মী-সমর্থক জড়ো করে ঢাকা অ্যাটাক অথবা যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া।

এ কাজে প্রজন্ম ৭১, মঞ্চ ৭১, ব্রিগেড ৭১, নিউক্লিয়াস ৭১, মুক্তিবাহিনী ৭১, হিস্টোরি অব আগস্ট, নয়া সংগ্রাম ২৫, প্রত্যাবর্তনস-০২, বঙ্গবন্ধু-৭১ এবং জয়বাংলা ব্রিগেডসহ এরকম শতাধিক ফেসবুক আইডি, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলকে প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।