Image description

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টায় জামায়াতে ইসলামী। দলটি ৫ আগস্টের পর থেকেই জোর কদমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরব আন্দোলন আর নীরবে ভোটের প্রস্তুতি-এই দুই কৌশলে এগোচ্ছে দলটি।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার জানান দিচ্ছে জামায়াত। একই সুর উচ্চারিত হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ তাদের সমমনা কয়েকটি দলের কণ্ঠেও। 

আলোচ্য পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে ইতোমধ্যে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত। এই দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না-এমন কথাও বলছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। তবে প্রকাশ্যে এ ধরনের শক্ত ভাষা ব্যবহার করলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো।  

জামায়াতই দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল যারা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৯০ টিরও বেশি আসনে প্রার্থী ইতোমধ্যে ঠিক করে রেখেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু আসনে চমক দেখাতে পারেন দলটির তরুণ নেতারা। ভোটারদের কাছে তাদের ইমেজ যথেষ্ট স্বচ্ছ।

প্রায় ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করার পর শীর্ষ থেকে তৃণমূল জামায়াতের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনি তৎপরতায় সক্রিয় আছেন মঞ্চ-ময়দানে। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।  

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ এলাকায় নানা কৌশলে গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন ইস্যুতে করছেন সভা-সমাবেশও। ভোটারদের আস্থা অর্জনে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে কী কী উদ্যোগ নেবে সেটিও জানান দিচ্ছেন নেতারা। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে দল ও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর নানা দমন-পীড়নের বিষয়টিও জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। 

এরমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান দলটির অন্তত তিন ডজন তরুণ প্রার্থী। আরেকটি সূত্র বলছে, ভোটের মাঠে এবার চমক দেখাতে চায় জামায়াত। এ কারণে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অর্ধশতকের বেশি তরুণ প্রার্থীদের ভোটের মাঠে ছেড়ে দিতে চাইছে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে এসব প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ও গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। 

দলীয় সূত্র মতে, নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর এসব আসনে কিছু পরিবর্তন হতে পারে। তবে আপাতত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় আছেন বেশির ভাগ ছাত্রশিবির থেকে উঠে আসা এসব নবীন প্রার্থী।  আবার কেউ কেউ পারিবারিকভাবে খুবই শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ডের। তাদের বাবা ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে স্বৈরাচারের হাতে শহীদ হয়েছেন কিংবা দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন।

প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়- তরুণ প্রার্থীদের কেউ কেউ আবার সংশ্লিষ্ট আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ সাঈদী। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তৃতীয় পুত্র মাসুদ সাঈদী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। পিরোজপুর-১ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী।

পিরোজপুর-২ আসনে লড়বেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় পুত্র শামীম সাঈদী। পিতার পরিচয়ে শামীম সাঈদীও আসন্ন নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আসন্ন নির্বাচনে একজন আলোচিত প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মাসুদ বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য। তিনি পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমান ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। বহুল আলোচিত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পুত্র ব্যারিস্টার আরমান পতিত সরকারের আমলে তার পিতার বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় লড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদী সরকার তাকে আয়নাঘরে গুম করে রাখে দীর্ঘদিন। হাসিনা সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান আরমান। তার প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি রয়েছে।

পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে দলটির সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

মতিউর রহমান নিজামীর ৬ সন্তানের মধ্যে নাজিবুর রহমান মোমেন দ্বিতীয়।‌ মোমেন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে ২০১০ সালে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। 

২০১৩ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে‌ ২০১৬ সালের ১০ মে মধ্যরাতে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় তার বাবা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর সরকারের নানা চাপে দেশত্যাগ করে লন্ডনে চলে যান। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার- গোলাপগঞ্জ) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সেলিম উদ্দিন এই আসনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। এখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরেক সাবেক ছাত্রদল নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মাঠে লড়তে হতে পারে তাকে। 

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩ (সোনাগাজী- দাগনভূঁইয়া) আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। এখানে বিএনপি’র একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হবে জামায়াতের এই নবীন প্রার্থীকে।

ড. মোবারক হোসেন কুমিল্লা-৫ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। ড. মোবারক হোসেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন। 

ব্যারিস্টার মাহবুব সালেহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। 

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। এ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। ফলে এখানে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা যায়। 

কুমিল্লা-১০ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতও আসন্ন নির্বাচনে একজন সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন। 

বাগেরহাট জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মঞ্জুরুল হক রাহাত আসন্ন নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। 

দিনাজপুর শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান। আগামী নির্বাচনে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

ঢাকা-১১ (রাজধানীর বাড্ডা- ভাটারা- রামপুরা হাতিরঝিল) আসনে লড়বেন জামায়াতের আরেক তরুণ প্রার্থী এডভোকেট আতিকুর রহমান। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। নবীন প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন তিনিও।

শেরপুর-২ আসনে জামায়াতের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। ছাত্রশিবিরের রাজনীতি থেকে উঠে আসা গোলাম কিবরিয়া ময়ময়নসিংহ মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে একজন নবীন প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়বেন বলে জানা যায়।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শিশির মনির। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তরুণ আইনজীবী হিসেবে শিশির মনির ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।

আতাউর রহমান সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার মিডিয়া শাখার দায়িত্ব পালন করছেন।

অধ্যাপক মাওলানা ইকবাল হোসাইন তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর। আগামী নির্বাচনে ইকবাল হোসাইন পঞ্চগড়-১ (সদর-তেঁতুলিয়া)আসনে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাদারীপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মৃধা আগামী নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। 

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন আইয়ুবী আগামী নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা আনোয়ারুল ইসলাম রাজু লালমনিরহাট-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী। মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। রংপুর-১ আসনে তিনি জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে নির্বাচনী তৎপরায় সম্পৃক্ত হয়েছেন

মাওলানা জহুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন। অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাশেদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি। রাসেল চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী।