Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে আজ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারকাজ শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আজ মঙ্গলবার থেকে ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার চালানো যাবে। এ ছাড়া আজ ঘোষিত হবে ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

সোমবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (চিফ রিটার্নিং অফিসার) অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দিন জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘোষিত সময়ে বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে সম্পূর্ণ আশাবাদী। এখন পর্যন্ত বড় কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি। তবে ভবিষ্যতেও যাতে না হয়, সে বিষয়ে আমাদের টিম কাজ করছে।’

এদিকে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সিনেট হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী জানান, বৈঠকে আচরণবিধি স্পষ্ট করা এবং সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে।

ইতোমধ্যে নির্বাচনে ২১ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তাদের বিবেচনায় রেখে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন। আজ ঘোষিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা।

এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটদানে জটিলতা এড়াতে হল কার্ড ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড কিংবা পে-ইন স্লিপ দিয়ে ভোট দেওয়া যাবে। একইসঙ্গে যারা ব্যালট বাক্সে ছবি ব্যবহার করতে চান, তাদের ২৭ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনাল কমিটি জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে আসাদুজ্জামান জিলানী ও খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে প্রচারকাজ শুরুর আগেই ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদল প্রার্থীদের নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে নারী প্রার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘যেখানে নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে কমিশনকে। এ সময় তিনি নারী প্রার্থীদের নিয়ে কুৎসিত মনোভাব প্রকাশ করা থেকে সবাইকে সরে আসার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে ছাত্রদলের এই প্রার্থী সম্প্রতি একাধিক টকশোতে অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে তাকে কবি জসীম উদ্‌দীন হলে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাকে যারা নির্যাতন করেছিল, তার মধ্যে তখন ছাত্রশিবিরেরও একজন ছিলেন। এমন অভিযোগের জবাবে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস পদপ্রার্থী এফএম ফরহাদ বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে আপনারা অভিযোগ তুলছেন, তার বিরুদ্ধে আজই মামলা করুন। আপনার কাছে যদি লিগ্যাল টিম না থাকে বা আর্থিক সামর্থ্য না থাকে, আমাদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ করে এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে কোনো লাভ নেই। আর যদি সত্যিকার অভিযোগ থাকে, তাহলে আইনি সহায়তা নিন, আমরা আপনাকে সব ধরনের সহায়তা করব।’

এসএম ফরহাদ বলেন, ‘অভিযোগ থাকলে মামলা করুন, আমরা আইনি সহায়তাও দেব।’

একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক দুর্বলতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাবি রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলেও একাডেমিক দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ গবেষণায় খরচ হয়, যেখানে অন্যান্য দেশে তা ২০ থেকে ২৮ শতাংশ।’ আমরা নির্বাচিত হলে অঙ্গীকার থাকবে গবেষণা ও একাডেমিক সংস্কারে জোর দিয়ে পরিপূর্ণ একটি একাডেমিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি রোববার রাত ১টার দিকে রোকেয়া হলে প্রবেশ করে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক হলে প্রবেশের নিয়ম আজ (মঙ্গলবার) থেকে শিথিল করা হয়েছে। এর আগে হলে যাওয়া স্পষ্ট নিয়ম ভঙ্গ।’

তবে উমামা ফাতেমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি কোনো নির্বাচনি প্রচার করিনি। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। রাত ১০টার আগেই হলে প্রবেশ করেছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে।’ তিনি ক্ষমা চাইলেও এটিকে নারীদের চলাচল সীমাবদ্ধ করার মানসিকতা হিসেবে আখ্যা দেন।

এদিকে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী খায়রুল আহসান মারজান অভিযোগ করেছেন, ‘বিভিন্ন হলে নির্বাচনি প্রচার চললেও প্রশাসন তা ঠেকাচ্ছে না। অথচ আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ভোটকেন্দ্র কম থাকায় দিনের ভোট রাতে করার পরিকল্পনা চলছে।’ তিনি ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর দাবি জানান।

এর আগে শনিবার সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম ও প্রাধ্যক্ষদের বৈঠকে কিছু অংশ নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব দিলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান স্পষ্ট করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া নির্বাচন পেছানো হবে না। তবে তার বক্তব্যে প্রশাসনের ভেতর দ্বন্দ্ব ও নির্বাচন বানচালের শঙ্কা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত তারা। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সব পক্ষই সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে দাবি তুললেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। কমিশন বলছে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা থেকে শুরু করে প্রার্থিতা বাতিল পর্যন্ত হতে পারে।

ডাকসু নির্বাচন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই নির্বাচন শুধু উৎসবই নয়, বরং গণতান্ত্রিক চর্চার এক পরীক্ষাও।