Image description

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আরো কয়েক মাস বাকি। অথচ এখনই আওয়ামী লীগ অনুসারি হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা পোস্টার ছাপিয়ে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। দলটির নেতাদের বেশির ভাগই পলাতক। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে এমন প্রত্যাশায় দলটির অনুসারীদের অনেকেই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনই একজন হলেন মাওলানা এম এ কাইউম আলী খান। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল (অব) ফারুক খানের অনুসারি এই ব্যবসায়ী গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানি) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি আসন্ন নির্বাচনের ৬ মাস আগেই পোস্টার ছাপিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় লাগিয়েছেন। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারাদেশে আওয়ামী লীগের শত শত অলিগার্ক রয়েছেন যারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ অনুসারীরা স্বতন্ত্র ব্যানারে নির্বাচনের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতে পলাতক হাসিনা একের পর এক হুংকার দিচ্ছে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা-খুন-দাঙ্গা-হাঙ্গামায় মেতে উঠার নির্দেশনা দিচ্ছে; অথচ আইন শৃংখলা বাহিনী নীরবতা পালন করছে। গাজীপুরের ত্রাস সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ‘আওয়ামী লীগকে থাকতে না দিলে ঢাকার মানুষকে ঘুমাতে দেব না’ হুংকার দেয়ার পরও প্রশাসন নীরব।

প্রশাসন থেকে শুরু করে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে এখনো আওয়ামী লীগ অনুসারিরা প্রবলভাবে শক্তিশালী। সে কারণে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও দলটির অনুসারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে না। ফলে আওয়ামী লীগ পর্দার আড়ালে থেকে অনুসারিদের আগামী সংসদে নেয়ার পরিকিল্পনা করছে। নির্বাচনের সময় কোটি কোটি টাকা খরচ করে হলেও নিজেদের লোকদের আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র হিসেবে এমপি বানাতে চায়। শুধু তাই নয় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে বিশৃংখলা করতে চায়। এমনকি বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি জোড়ালো করার চেষ্টা করছে।

গণহত্যা করে পলাতক শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হিন্দুত্ববাদী ভারত এক বছরে নানান অপচেষ্টা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে প্রতিটি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে। অতপর আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে নতুন কৌশল নিয়েছে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা। আগাসী সংসদে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নির্বাচনের থিউনি নিয়ে কন্টেইন ক্রিয়েটার ও এক্টিভিসকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারনায় নামায়। অতপর দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। মূলত আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে ভারতে গেলেও দেশে এখনো দলটির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোটার রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোটে যাতে আওয়ামী লীগ অনুসারি এবং তাদের পক্ষ্যে ব্যাক্তিরা কোনো দলের ব্যানারে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে এমপি হতে পারে সে জন্যই পিআর পদ্ধতির ভোটের দাবি জোড়ালো করা হয়।

সুত্র জানায়, ভারতের নীল নকশা অনুযায়ী পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবির জোড়ালো করতে আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে পিআর পদ্ধতির পক্ষে মাঠে নামাতে বিপুল অর্থ ব্যায়ের টোপ দেয়া হচ্ছে। এমনকি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ পিআর পদ্ধতির আন্দোলন জোরদার করতে পর্দার আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন। ফারুক খানের অনুসারী কাইউম আলী খানের মতো শত শত ব্যাক্তিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলীয় জোটের একজন নেতা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পেটের ভিতরে থেকে ছাত্রশিবির ১৫ বছর রাজনীতি করেছে। সারাদেশের জামায়াতের ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে। এখন জামায়াত রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিএনপিকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে কাজে লাগাতে ছেস্টা করবে। এটা তারা পর্দার আড়ালে করবে। যার জন্য হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখনই কঠোর না হলে আমি-ডামি নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগের নেতা-অনুসারিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হবে। তখন দেখা যাবে কাগজে কলমে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলেও সারাদেশে শত শত স্বতন্ত্রলীগের ব্যানারে প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নামবেন। আর তারা বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের লুটের অর্থ এবং দিল্লির দেয়া অর্থ নির্বাচনে খরচ করে ভোটা কেনার চেষ্টা করলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।