
নজিরবিহীন ভ্রমণে বাংলাদেশে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারে ঢাকার আমন্ত্রণে দুদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। গত ৩০ বছরে দেশটির কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
ঢাকা পৌঁছেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেন ইসহাক দার। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে দুদেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন এক সম্পর্ক গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকায় এসেছেন ইসহাক দার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বার্থের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে পাকিস্তানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনে পৌঁছে বেলা ৩টার দিকে প্রথমেই এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আগে যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যেসব বিষয়ে উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের, কোনো হেজেমনি (আধিপত্য) থাকবে না।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় একটা যুদ্ধ হয়েছিল। পানি নিয়ে এ অঞ্চলে আবার যদি কোনো যুদ্ধ আসে বা আমাদেরও অনেকগুলো নদী রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়েও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা আমাদের বলেছেন গত ১৫ বছরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে অনেকভাবে চেষ্টা করেছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের কালচারাল হাউস করা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামগুলো কীভাবে উন্নত করা যায়, ডিফেন্স সেক্টরে কীভাবে কি করা যায়—সেসব নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, একাত্তর সম্পর্কিত ইস্যুর পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ককে কীভাবে আরো সক্রিয় করা যায় এবং এখানে একটা ইস্যু উঠে এসেছে, ভারতের কারণে সার্কটা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এ বিষয়ে ইসহাক দারের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এনিসিপির পর ইসহাক দার বৈঠকে বসেন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে। এতে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. তাহের বলেন, সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সাক্ষাৎকালে দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে বাড়ানো যায়-এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আগামী দিনে দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে আরো কীভাবে বিনিময় বাড়ানো যায় এবং সার্ককে কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়-এসব বিষয়ে কথা বলেছি।
ডা. তাহের আরো বলেন, গত ১৫ বছর তো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি কিছুটা একপেশে ছিল। বাংলাদেশ সরকার ও আমরা মনে করি, এ অঞ্চলে সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকা দরকার। এ ব্যাপারে তারাও জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রোববার সরকারের সঙ্গে তাদের বৈঠক আছে। আমরা বলেছি, যেসব অমীমাংসিত ইস্যু আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করা দরকার।
সব মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্কের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন যেসব সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের যে সমস্যার বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে যেন ঐক্যবদ্ধ একটা অবস্থান নেওয়া, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না-সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন কীভাবে হবে, প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টি এসেছে, তবে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
এছাড়া একাত্তরের অমীমাংসিত কোনো বিষয়ে আলোচনা করেছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব সরকারের আলোচনার বিষয়। আমরা আশা করি, তারা সেটা আলোচনা করবে।
জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সোয়া ৭টা পর্যন্ত ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিনা রহমান। এছাড়া বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। এ বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ইসহাক দার পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। সার্ক গঠনে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং অতীতের বাংলাদেশ-পাকিস্তান উচ্চপর্যায়ের মতবিনিময়ের কথা স্মরণ করেন ইসহাক দার।
পাকিস্তান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ইসহাক দারের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা অংশ নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রোববার সকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক করবেন ইসহাক দার। ওই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। পরে সকাল ১০টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একান্তে এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
বৈঠকে বাণিজ্য, হালাল ফুড প্রসেসিং, কানেকটিভিটি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, প্রতিরক্ষা, খাদ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আলোচনায় সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুদেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।
যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলোÑদুদেশের অফিসিয়াল ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি। দুদেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুদেশের মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা সই।
বিকাল ৪টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া ইসহাক দার একটি প্রাতরাশ বৈঠক করবেন।
তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে যাবে সফরের ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়েছিল। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি নিয়ন্ত্রিত পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে আসে ঢাকা। একটি স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে ইসহাক দারের ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকা সফরে আসার কথা ছিল। ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে তখন এ সফর স্থগিত করা হয়। দুদেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নতুন এই সফরসূচি চূড়ান্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এবার ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। বহু বছর পর আবার দুদেশের মধ্যে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক সংলাপ। ইসহাক দার জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পরিস্থিতির পর পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য হিসেবে ঢাকায় আসেন। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী। আর গত বুধবার ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান।
ইসহাক দারের সফর এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্কের জন্য আমরা কাজ করছি। ইসহাক দারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতেই কথা বলব। ৭১-এর বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। তবে একটি ইস্যুর জন্য অন্যসব ইস্যু আটকে থাকবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদেশের সম্পর্ক নতুন এক যাত্রা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান।
ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আমরা সম্পর্কের এক নতুন যাত্রা শুরু করেছি। এ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে যে কোনো ইস্যুতে আলোচনায় প্রস্তুত রয়েছি।’
ইসহাক দারের সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, সফরটি রাজনৈতিক। এ সফরের গুরুত্ব অনেক। ইসহাক দার পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরই তার স্থান। তাই দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তার এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের নতুন সূচনা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার দুবার দেখা হয়েছে। দুই নেতাই সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আরোপ করা ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। করাচি থেকে পণ্য নিয়ে কার্গো শিপ চট্টগ্রাম এসেছে। ফ্লাই জিন্নাহ এবং এয়ার সিয়াল নামে দুটি বেসরকারি বিমান সংস্থাকে সরাসরি বাংলাদেশে ফ্লাইট অপারেশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে আবার নতুন করে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করেছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় নৌ-মহড়া ‘আমান ২০২৫’-এ অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সব মিলিয়ে দুদেশের মধ্যে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গত এপ্রিল মাসে ১৫ বছর পর দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে নতুন করে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইসহাক দারের সফর দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিশ্চিতভাবেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর। কয়েক দশক পর এই রাজনৈতিক সফর হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারিত হতে পারে। এখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন একটি ভিত্তি পাবে।