
এক বছর আগে মজিব বন্ধনায় লিপ্ত থাকা পুলিশ কর্মকতারা এখন ব্যস্ত অন্য এক নেতার গুনগানে। রাতারাতি রং বদলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় চরম সুবিধা আদায় করা এ সব পুলিশ কর্মকর্তারা পদোন্নতি বাগিয়ে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতি পেতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তদবিরে নেমেছেন। সরকারের প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি, বিএনপি ও জামায়াতের কতিপয় দুর্নীতিবাজ নেতাদের এরই মধ্যে হাত করে নিয়েছেন ফ্যাসিস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। অথচ আওয়ামী সরকারের ১৫ বছর এ সব কর্মকর্তারাই বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করাসহ খুন ও গুমের টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন বছরের পর বছর। এমনকি পতিত আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার, মেট্টোপলিটনে ডিসি (উপপুলিশ কমিশনার), ডিবি, সোয়াত ও সিটিটিসিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে থেকে জঙ্গী নাটক বানিয়ে বহু নিরপরাধ যুবকের জীবন ধ্বংস করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ একটাই ছিল তারা আওয়ামী রাজনীতির বিরোধী মতের কণ্ঠস্বর ছিলেন।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, পতিত আওয়ামী সরকারের ১৫ বছর বিভিন্ন জেলার এসপি, মেট্টোপলিটনে ডিসি (উপপুলিশ কমিশনার), ডিবি, এসবি, সোয়াত ও সিটিটিসিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায় থেকে চরমদুর্নীতি, বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করা, খুন ও গুমে সহযোগিতা, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সহযোগিতা এখন রং বদলে নিজেদের সুবিধা বঞ্চিত নাম দাবি করে পদোন্নতি ও পদ দখলের জন্য মাঠে নেমেছেন। মোটা অংকের টাকা খরচ করে এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতরের কতিপয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সন্তানকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন।
এসব কর্মকর্তারা আরো বলেন, এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পদায়ন করা হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আইন-শৃংখলা অবনতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়। অথচ সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশবাসি চায় নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নিবাচন। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে, জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বঞ্চিত যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া না হলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অপরাধ ও সামাজিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ফ্যাসিস্ট সরকারের গত পনেরো বছর ধরে পুলিশে বঞ্চিত ও নির্যাতিত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বর্তমান সরকারের এক বছর হলেও অনেক কর্মকর্তা এখনো বঞ্চিত রয়ে গেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় মুজিব বন্ধনায় ব্যস্ত কর্মকর্তারাও স¤প্রতি পদোন্নতি পেয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে যেখানে প্রধান উপদেষ্টা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে পুলিশের চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে সুষ্ঠ নির্বাচন বাধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বঞ্চিত, যোগ্য,সৎ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে সাজানো হলে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার সুফল পাবে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকারের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সুবিধাভোগী এবং বিরোধী মতকে দমনের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়নে ভ‚মিকা রাখছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক বাণিজ্য। পতিত আওয়ামী সরকারের মতো টাকার বিনিময়ে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পুলিশের নেতৃত্বে আনা হলে সরকারের ভেতরের পরিকল্পনা পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী নেতাদের কাছে তথ্য পাচার করবে। ফলে দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির আশংকা থেকে যায়।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২১ বিসিএস কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আলী আহমদ খান, প্রবীর কুমার রায়, হাসিবুল আলম। ২০ বিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন.অতিরিক্ত ডিআইজি মো: আনিছুর রহমান, বরকতুল্লাহ খান, মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, আশরাফুল ইসলাম, ওয়ালিদ হোসেন, সৈয়দ মোসফিুর রহমান, ফয়সল মাহমুদ, রশীদুল হাসান, তোফায়েল আহম্মদ, মনিরুজ্জামান, এস এম এমরান হোসেন, মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, বিধান ত্রিপুরা, মো: গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও ইকরাব হোসেন প্রমুখ। এছাড়া রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুস সোবহান। তিনি এক সময় মজিব বন্ধনায় ব্যস্ত ছিলেন।
অপরাধ ও সামাজিক বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, পুলিশে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা ও আইন শৃঙ্খলা উন্নয়ন করতে হলে নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পেশাদার ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা বর্তমান সময়েও পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন মানেই জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতার আন্দোলনের আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মত। বর্তমান সরকার জনবান্ধব পুলিশ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর। শুধু তাই নয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সুষ্ঠ নির্বাচনে পুলিশকে প্রস্তুত করতে হলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সহযোগী সুবিধাবাদী পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।