
কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা শিয়ালদহ। মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলে কলকাতার ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। স্টেশনের কাছেই দীর্ঘদিনের পুরনো হোস্টেল কারমাইকেল। মূলত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি ওই হস্টেলে থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বহু ছাত্র।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই হোস্টেলের কয়েকজন মুসলিম ছাত্র পাশের একটি দোকানে যান মোবাইলের কভার কিনতে।
ওই দোকানে গিয়ে ছাত্ররা বাংলায় কথা বলেন। এরপর হঠাৎ তাদের ওপর চড়াও হন স্থানীয় কয়েকজন। ভুক্তভোগী ছাত্রদের অভিযোগ, তাদের “বাংলাদেশি”, “রোহিঙ্গা” ইত্যাদি বলা হচ্ছিল। ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করলে প্রথমে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এতে আরও লোক জমে যায়। তাদেরই কেই কেউ ছাত্রদের মারধর শুরু করে।
এই ঘটনায় মুচিপাড়া থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্ররা। তাতে বলা হয়েছে, ছাত্রদের রড, হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়েছে। ছুরি দিয়ে কোপানোর চেষ্টা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ঘটনাস্থলে অন্তত ১০-১২ জন উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ওই দোকানের মালিক এবং উল্টো দিকে একটি কাপড়ের দোকানের মালিক ছিলেন।
ছাত্ররা জানিয়েছেন, তাদের ঘিরে ধরে যখন মারধর করা হয়, তখন তারা হোস্টেলে ফোন করে আরও কিছু বন্ধুকে ডাকেন। তারা এলে, তাদেরও মারধর করা হয়। ঘটনার পর রাতে ওই ছাত্রদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মেডিকেল সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে।
রাতেই মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্ররা। অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজনকে প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, আটক দুই ব্যক্তি অবাঙালি। এফআইআর-এ যাদের বিরুদ্ধে ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, তাদের অবাঙালি বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
এফআইআর-এ বলা হয়েছে, “ওই দুই ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথা বলছিলেন। বলছিলেন, ‘এরা সব বাংলাদেশি রোহিঙ্গা, এদের সবাইকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে’।”
পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের জেরা করে বাকি হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে এই ঘটনায় রীতিমতো আলোড়ন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারমাইকেলের হোস্টেল সুপারসহ আহত ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
অন্যদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে মধ্য কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। মিছিলের অন্যতম আয়োজক কৌশিক মাইতি বলেছেন, “এতদিন আমরা শুনছিলাম ভারতের অন্য প্রদেশগুলোতে বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এবার খোদ কলকাতাতেই এই ঘটনা ঘটল। এখনই সরব না হলে এমন ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, আমরা সেখানেই মিছিল করবো।”