Image description
 

চাকুরে পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।

 

সোমবার সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

 

তার ভাষ্যে, ‘মাতৃকালীন ছুটির সাথে পিতৃকালীন ছুটির কথা বলা হচ্ছে। বাবারা শিশুদেরকে ঠিক মত সময় প্রদান করলে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া যায়। তবে এজন্য তিনটি শর্ত মানতে হবে।

‘শিশুকে সময় দিতে হবে, শিশুর যত্ন নেওয়ায় সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে এবং শিশুটির মায়ের সেবা করতে হবে। পিতৃত্বকালীন ছুটি যদি দিতে হয়, তাহলে সেখানে লিখিত শর্ত থাকবে।

‘একজন পিতা কতক্ষণ বাচ্চাকে দেখেছেন, বাচ্চার প্যাড পরিষ্কার করেছেন, মায়ের সেবা করছেন-এসব লিখিতভাবে দিতে পারলে আমি রাজি আছি।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বাচ্চা দুধ পাবে। দেশে দারিদ্র্য হার বেশি, সরকারি হিসেবে কোথাও ২০, আবার কোথাও ২৫ শতাংশ। বেসরকারি হিসেবে আরো বেশি। অনেক মা ঠিক মতো পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন না। শিশুর ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়েদেরও যত্ন নিতে হবে।

‘শাল দুধ শিশুর জন্য উপকারী, শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। আশির দশকে ক্যাম্পেইন হতো। একটা মা যখন মা হতে চায়, তখন থেকে পরিচর্যা শুরু হয়। মাকে কাঠখড় পোহাতে হয়। পরিবারে সবাই সবার খোঁজ নিতে হবে। বউয়ের খোঁজ নিতে হবে শাশুড়িকে, আবার শাশুড়ির খোঁজ নিতে হবে বউকে। আমাদেরকে সেবা নিতে জানি, সেবা দিতে জানি কম।’

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে দেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ দেওয়ার হার কমছে। ২০১৭- ২০১৮ সালে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালের জরিপের তথ্য বলছে এ হার বর্তমানে ৫৮ শতাংশ। এছাড়া ৬ থেকে ২৩ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের সাহচার্যে থাকার হার ২০১৭-২০১৮ সালে ছিল ৩৫ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে হয়ছে ২৯ শতাংশ।

ডা. সারিয়া তাসনিম বলেন, মাতৃদুগ্ধ দেওয়ার হার কমার পেছনে কারণ হলো, মাতৃদুগ্ধপানের কৌশল ও উপকারিতার ওপর বড় পরিসরে নিয়মিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করা।

‘সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমে প্রচার না করা। বিএমএস আইন ২০১৩ এবং বিবিমালা ২০১৭ লঙ্ঘনের কারণে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। কর্মজীবি মায়েরা সীমিতভাবে অথবা একবারে ছুটি না পাওয়া। কর্মস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানো বা সংরক্ষণের সুযোগ না থাকা। কর্মস্থলে যোগদানের জন্য মায়েরা খুব দ্রুত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে গুঁড়োদুধ খাওয়ান।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে মাতৃদুগ্ধের সম্পর্ক নিবিড়। বাংলাদেশে দিনে দিনে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে কৃত্রিম খাবার খাওয়ানোর হার বাড়ছে।’

কর্মশালায় মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোক্তা ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে একটি মিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ধর্মীয় একটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তা আটকে আছে।

‘আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনি আমাদের মিল্ক ব্যাংক দেখেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দেন। বাংলাদেশে মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে অনেক মা-হারা নবজাতক মারা যাচ্ছে। মিল্ক ব্যাংক হলে এসব নবজাতকেরা আপনার জন্য দোয়া করবে।’

কর্মশালায় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, বিবিএফের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস কে রায়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।