
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য আকর্ষণীয় এক চেয়ার বানিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকার সফল খেজুর চাষি আব্দুল মোতালেব। সেই চেয়ারে তারেক রহমানকে বসিয়ে আত্মতৃপ্তি পেতে চান এই কৃষক। তারেক রহমানকে ভালোবেসে এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনে বানানো নতুন দুইটি চেয়ার সামনাসামনি রাখা। একটি চেয়ার বড়, অন্যটি তুলনামূলক একটু ছোট। বড় চেয়ারটি একটু বেশি আকর্ষণীয়। সঙ্গে রাখা আছে, দুইটি কাঠের পাখা। পাশেই রয়েছে- একটি খাট, চেয়ার ও দুইটি ডাইনিং টেবিল। চেয়ারের পেছনের দেওয়ালে টানানো রয়েছে একটি ছবি। ছবিতে রয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কৃষক আব্দুল মোতালেবসহ অন্যরা।
জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে বাড়ির আঙিনায় সৌদি খেজুর চাষ শুরু করেন আব্দুল মোতালেব। বাগানে ছিল অগণিত খেজুর গাছ। ২০০৪ সালে এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা নজরে পড়ে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের। এরপর একই বছরের ১৬ জুন খেজুর বাগান পরিদর্শে আসেন তারেক রহমান। কিন্তু তখন আব্দুল মোতালেব মাটির ঘরে বসবাস করতেন। তারেক রহমানকে বসতে দেওয়ার মতো চেয়ারও দিতে পারেননি তিনি।
সেদিনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, খেজুর বাগান করে সফল হতে পারলে তারেক রহমানের জন্য দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চেয়ার বানাবেন। ধীরে ধীরে সফলতা ধরা দেয়। খেজুর আর চারা বিক্রি করে কিনেছেন জমি, নির্মাণ করেছেন দোতলা বাড়ি। বছরে আয় করছেন ৫০ লাখ টাকার বেশি। এমন সফলতায় তারেক রহমানের জন্য এগুলো তৈরি করা হয়েছে। তারেক রহমানকে চেয়ারে বসাতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন আব্দুল মোতালেব।
এছাড়া একটি চেয়ার বানানো হয়েছে কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আই’ এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজের জন্য। খেজুর বাগান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বাগানটি দেশে পরিচিতি করানোয় চেয়ারটি বানানো হয়েছে। শাইখ সিরাজকেও বসাতে চান একটি চেয়ারে।
আরও জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে চেয়ারসহ আরও কয়েকটি কাঠের জিনিসের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এগুলো নির্মাণ করেন সুজন নামের একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি ভালুকার গতিয়ার বাজার এলাকার অমূল্যের ছেলে।
নির্মাণের আগে সুজনের সঙ্গে চুক্তি করেন আব্দুল মোতালেব। চুক্তিতে বলা হয়, এরকম নকশার চেয়ার কার কাউকে নির্মাণ করে দেওয়া যাবে না। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে রাজি হওয়ায় সুজনকেই কাজ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে কাজ শুরু করেন সুজন। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৪ সালে। চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র বানাতে আব্দুল মোতালেবের খরচ হয় ৫০ লাখ টাকার বেশি। শুধুমাত্র দুইটি চেয়ার বানাতেই খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। তারেক রহমানের জন্য নির্মাণ করা চেয়ারটিতে করা নকশা বাংলাদেশের আর কোনো চেয়ারে নেই।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল মোতালেব সফল খেজুর চাষি। একসময় দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করলেও বর্তমানে কোটিপতি তিনি। মোতালেবকে নিয়ে এলাকার লোকজন গর্ববোধ করেন। সৌদি খেজুর চাষের মাধ্যমেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এরইমধ্যে তারেক রহমানের জন্য আলিশান চেয়ার তৈরির বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। এতে আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আব্দুল মোতালেব। তারেক রহমানকে দাওয়াত দিয়ে এনে চেয়ারে বসানোর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তিনি। এলাকাবাসীও চায়, দেশে ফিরে তারেক রহমান ভালুকায় আসুন। এতে ভালুকা উপজেলার সড়কসহ বিভিন্ন খাতে আরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগার সম্ভবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল নামের একজন বলেন, তারেক রহমান ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। তিনি খেজুর বাগানে এলে কৃষক আব্দুল মোতালেবসহ ভালুকাবাসী অনেক খুশি হবে। তারেক রহমান ভালুকাসহ পুরো ময়মনসিংহে সুনজর দিলে এখানকার চিত্র পাল্টে যাবে। এতে ময়মনসিংহের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপকৃত হবে।
তারেক রহমানের জন্য চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র বানানো মিস্ত্রি সুজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ৬ বছর আগেই চেয়ারসহ সবগুলো বানানো শেষ করেছি। বানানোর সময়ে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পেয়েছি। কাজ শেষ হওয়ার পর আব্দুল মোতালেব আমাকে তার খেজুর বাগানে কাজে যোগদান করতে বলেন। এরপর থেকে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতনে বাগানে কাজ করছি। এই টাকায় পরিবারের ভরণপোষণ করছি।
কথা হয় আব্দুল মোতালেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপিকে আমি মনেপ্রাণে ভালোবাসি। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ১৪টা মামলার আসামি হয়েছি। এগুলো রাজনৈতিক মামলা ছিল না। মামলাগুলো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। গণমাধ্যমে আমার খেজুর বাগান নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তারেক রহমান বাগান দেখতে চলে আসেন। তিনি কৃষি ও কৃষককে ভালোবাসেন বলেই এসেছিলেন। তখন তারেক রহমানকে বসতে দেওয়ার মতো আমার ঘরে কোনো চেয়ার ছিল না। তাই দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চেয়ার তারেক রহমানের জন্য নির্মাণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, খেজুর বাগান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বাগানটি দেশে পরিচিত করানোয় আরেকটি চেয়ার শাইখ সিরাজের জন্য বানানো হয়েছে। এছাড়া কাঠের পাখা, তলোয়ার, খাট, চেয়ার ও ডাইনিং টেবিলও বানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক আগে বানানো শেষ হলেও চেয়ারে এখন পর্যন্ত কাউকে বসতে দিইনি। আমার ইচ্ছা, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চেয়ারে বসে উদ্বোধন করবেন। এতে মনে প্রশান্তি পাব।
এক সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাটির ঘরে বসবাস করতেন আব্দুল মোতালেব। একটু সুখের আশায় ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুর বাগানে কাজ করেন। এসময়ই তিনি মাতৃভূমিতে খেজুর চাষের পরিকল্পনা করেন।
সে অনুযায়ী ২০০১ সালের শেষ দিকে উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসেন। মানুষ বিদেশে গেলে স্যুটকেস-ভর্তি জিনিস নিয়ে আসে। আর মোতালেব খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন। এতে স্থানীয় লোকজন হাসাহাসি করতো। অনেকে তাকে পাগল বলতো। কারণ মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল খেজুর সব মাটিতে হয় না। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে বাড়ির আঙিনায় ২ বিঘা জমিতে রোপণ করেন ২৭৫টি চারা। কিন্তু প্রায় সব গাছই পুরুষ হয়ে যাওয়ায় খেজুর হয়নি। আবার চারা লাগালে আবারো একই অবস্থা। তৃতীয় দফায় দুটি গাছে খেজুর হয়।
ধীরে ধীরে ৭টি মাতৃগাছ পাওয়া যায়। বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করেন মোতালেব। হতাশা কাটিয়ে সফলতা দেখা দেয়। প্রায় আড়াই দশকে মোতালেবের সাফল্যের পাল্লা ভারী হয়। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুর বাগানে ৩ হাজারের বেশি সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ রয়েছে। তার বাগান থেকে বছরে এখন আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।
এছাড়া দেশি ও বিদেশি জাতের চারা ক্রস করে রসের জন্য আরও ৭ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ হাজার গাছ নিয়ে নতুন একটি বাগান করেছেন মোতালেব। গুড় উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এই বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে বীজের চারা এক হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন মোতালেব। কাটিং করা প্রতিটি কলমের চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করছেন। এই চারা বিক্রি করার সময় খেজুর হবে এমন গ্যারান্টি দিয়ে অনেককে স্টাম্পে লিখিতও দেন আব্দুল মোতালেব।