
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গ্রহণ হবে। এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে। মনোনয়নপত্র গ্রহণ চলবে আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। পরদিন ২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই ও ২১ আগস্ট প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২৫ আগস্ট। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ আগস্ট।
এই নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্যানেল গোছাচ্ছে ক্যাম্পাসের সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। পাশাপাশি তাদের নানামুখী তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া দলীয় বিভিন্ন প্যানেলের বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র প্যানেলের বিষয়েও ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে। উমামা একসময় ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ছাত্রদলের কোন পর্যায়ের নেতারা এবার ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতারা। সেখানে ক্যাম্পাসের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ, ডাকসুসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই মিটিংয়ে উপস্থিত দুই ছাত্রদল নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, ছাত্রদলের প্যানেলে কারা থাকবেন এবং কী নামে প্যানেল হবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ২০১৩-১৪ সেশনসহ আগের ব্যাচগুলোর ব্যাপারে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যান্য প্যানেলে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের সব ব্যাচের প্রার্থীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছাত্রদলের প্যানেল দেওয়া হবে। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্যানেলে প্রাধান্য পাচ্ছেন।
মিটিংয়ে উপস্থিত আরেক ছাত্রদল নেতা জানান, যারা অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অর্থাৎ ক্যাম্পাসের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সর্ম্পক বেশ ভালো তাদেরকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। ফলে ডাকসু নির্বাচনে তারেক রহমানের প্রাধান্য পাচ্ছেন তরণরাই। আর যারা অপেক্ষাকৃত সিনিয়র অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে সামনের সারিতে যারা আছেন; তারা ছাত্রদলের রাজনীতি করবেন। এ বিষয়ে তারা প্রাথমিকভাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার রাতে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। হয়তো এরপর সবাই ঐক্যমতে প্যানেলের নামে ঘোষণা হবে দুয়েকদিনের মধ্যে।
জানা গেছে, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাম ছাত্রসংগঠন এই নির্বাচনে প্রার্থীদের সেশন ২০১৪-১৫ এরপর থাকছে। সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলও তাদের প্রার্থীতা এসব সেশন নির্ধারণ করতে চলছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা ২০১৪-১৫ সেশন, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ২০১৫-১৬ সেশন, ছাত্রশিবিরের আবু সাদিক কায়েমের ২০১৬-১৭ সেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আব্দুল কাদের ২০১৮-১৯ সেশন ও উমামা ফাতেমা ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন। ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। এসব ভোটার অধিকাংশই নিয়মিত শিক্ষার্থী। তবে কিছু শিক্ষার্থী যথাসময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি, তারাও ডাকসুর ভোটার। কারণ এবার ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার বয়সের বাধা তুলে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদল বলছে, ডাকসু যেহেতু ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং তাদের ভোটেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অপেক্ষাকৃত তরুণ ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাছাড়া জুলাই আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী সরাসরি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত মাঠে ছিলেন তাদেরকে এই প্যানেলে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নিয়মিত শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পেলে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে লড়তে শীর্ষ পদে (ভিপি, জিএস, এজিএস) আসতে পারে তারা হলেন ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়াজ মোহাম্মদ ইমন, আবিদুল ইসলাম খান, দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসী উদ্দিন তামি; ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের ঢাবি শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জারিফ রহমান, ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আন্তর্জাতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাইফ উল্লাহ সাইফ; ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও কবি জসীমউদ্দীন হল শাখার আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম, মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সদস্য সচিব আবিদুর রহমান মিশু ও বিজয় একাত্তর হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদ উল্লেখযোগ্য। তবে চূড়ান্ত সবকিছুরই নির্ভর করছে আজ আরেকটি বৈঠক হওয়ার পর।