
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন কমিশনও এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রার্থী নির্বাচন-প্রচারণা নিয়ে সরব। জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছেন। শীর্ষ নেতৃত্ব সবার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। নেতারাও গণসংযোগ ও সদস্য সংগ্রহে সময় পার করছেন।
সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমান দেশে ফেরার ঘোষণা দেওয়ায় নেতাকর্মীরা বেশ চাঙা। তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিছু এলাকায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও সম্মিলিত সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও আছেন মনোনয়ন দৌড়ে। যদিও সাবেক নেতারা এখন কেউ কেউ দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আছেন। কয়েকজন আগে এমপি-মন্ত্রীও হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা। তারাও দলের জন্য কাজ করছেন এবং মনোনয়ন দাবিদার। সাবেক এসব নেতা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে প্রার্থী হিসেবে জয় নিশ্চিত করতে চান।
তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির মনোনয়ন পেতেও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে কারা প্রার্থী হবেন।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন ১৯৮৭ সালে ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুন্সিগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তিনি এ আসনে প্রার্থী হতে চান।
আমি বিশ্বাস করি, দল আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং ত্যাগের জন্য আমাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়ে স্বপ্নপূরণ ও এলাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবেন। আমি আমার নিজের উপজেলার মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার জন্য প্রস্তুত।- কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ
ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান। তিনি বিএনপির ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৩ আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচন করেন। একই আসনে তিনি এবারও প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা যায়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন ১৯৯২ সালে। তিনি বিএনপির দফতর সম্পাদক ও মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি ঠিক কোন আসনে প্রার্থী হতে চান তা নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
এ কে এম ফজলুল হক মিলন বতর্মানে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক দল গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের (ঢাকা বিভাগ) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গাজীপুর-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ১৯৯৬ সালে ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সমন্বয়ক, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব এবং লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে মনোয়নপ্রত্যাশী।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকা-৮, ৯ অথবা রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।
এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বর্তমানে বিএনপির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল (খুলনা-৪), সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু (টাঙ্গাইল-৫), আমিরুল ইসলাম খান আলিম (সিরাজগঞ্জ-৫), আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল (নরসিংদী-৪), মামুনুর রশীদ মামুন (নোয়াখালী-১), রাজীব আহসান (বরিশাল-৪), আকরামুল হাসান (নরসিংদী-৩), ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ (যশোর-৬), সাইফ মাহমুদ জুয়েল নোয়াখালী-৪ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
দল নিশ্চয় তরুণদের চাহিদার কথা বিবেচনা করবে এবং সেটা কাজে লাগিয়ে প্রার্থী বাছাই করবে। নরসিংদী-৩ আসনের তরুণদের পাশাপাশি আমার বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ফলস্বরূপ সিনিয়র নাগরিকদেরও সমর্থন আমার সঙ্গে আছে। দল চাইলে আমি ভোটের মাঠে লড়াই করতে প্রস্তুত।- আকরামুল হাসান
নির্বাচনের প্রার্থিতা বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেকটি রাজনৈতিক মানুষের জীবনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন তার নিজের এলাকার সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া। আমারও স্বপ্ন, আমার নিজ এলাকা যশোরের কেশবপুর উপজেলাবাসীর সেবা করা। এজন্য আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।’
তিনি বলেন, ‘আমি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, দল আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং ত্যাগের জন্য আমাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়ে স্বপ্নপূরণ ও এলাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবেন। আমি আমার নিজের উপজেলার মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার জন্য প্রস্তুত।’
ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে, জেল-জুলুম উপেক্ষা করে অবিচল ছিলাম। সোনাইমুড়ী-চাটখিল অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করতে আমি সব সময় দৃঢ়প্রত্যয়ী। দল আমাকে আমার অঞ্চলের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেবে বলে প্রত্যাশা।’
নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য আকরামুল হাসান বলেন, ‘আমার আসনে দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের অনেক বড় একটা অংশ তরুণ। দল নিশ্চয় তরুণদের চাহিদার কথা বিবেচনা করবে এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থী বাছাই করবে। নরসিংদী-৩ আসনের তরুণদের পাশাপাশি আমার বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ফলস্বরূপ সিনিয়র নাগরিকদেরও সমর্থন আমার সঙ্গে আছে। দল চাইলে আমি ভোটের মাঠে লড়াই করতে প্রস্তুত।’