Image description

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভারত সীমান্তবর্তী জেলা। সেখানে রয়েছে অন্যতম বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর। এই পথে আমদানির আড়ালে ও সীমান্ত দিয়ে রমরমা চোরাকারবারির মাধ্যমে দেশে ঢুকছে প্রচুর মাদক। আওয়ামী জমানায় এই কারবার ছিল জমজমাট। নেশার জাতীয় দ্রব্য বিক্রির টাকায় ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছেন বহু আওয়ামী লীগ নেতা। জুলাই বিপ্লবে দলটির অধিকাংশ হোমরা-চোমড়ারা পালিয়ে গেছেন। অতিকৌশলীরা টিকে আছেন বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম মাদক মাফিয়া সাদিকুল ইসলাম।

দেড় দশক আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় কারবার চালিয়েছেন সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তেররশিয়া গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর ছেলে সাদিকুল। অর্থায়ন করেছেন গত বছর জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন দমনচেষ্টায়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ভোল পাল্টান এই মাফিয়া। রাতারাতি বদলে ফেলেন পোশাক। মুজিব সৈনিক থেকে হয়ে যান জাতীয়তাবাদী। বিপুল টাকার বিনিময়ে বাগিয়েছেন বিএনপির বড় পদও। এই রাজনৈতিক প্রশ্রয় তাকে বানিয়েছে আরো বেপরোয়া। অব্যাহত রেখেছেন রমরমা মাদক কারবার। পরিচালনা করছেন বিশাল চক্র। জুলাই বিপ্লবের পর সব ‘গডফাদার’ পালিয়েছেন বা গা ঢাকা দিয়েছেন তাদের আস্তানাও দখলে নিয়েছেন সাদিকুল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদিকুল দেড় দশক বিএনপির বিরোধিতা করলেও গত ৫ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর দলটির নেতা বনে গেছেন। জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে পেয়েছেন ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, সাদিকুল চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাকে বিএনপি নেতা বানিয়ে নেশা জাতীয় দ্রব্য বেচাকেনাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন বিতর্কিত মানুষকে বিএনপির নেতৃত্বে এনে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, সাদিকুল ‘সাদিয়া ট্রেডার্স’ নামে আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি এই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মাদক কারবার চালিয়ে আসছেন। মালিক হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের স্বরূপনগরে করেছেন বহুতল ভবন। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও প্লট। পুলিশের রেকর্ডেও তিনি চিহ্নিত অপরাধী, তার নামে আছে মাদকের অন্তত চারটি মামলা।

কয়েক মাদক কারবারি জানায়, জুলাই বিপ্লবের পর মাদকের অন্ধকার জগতেও আসে বড় পরিবর্তন। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্যের সাম্রাজ্যে ছড়ি ঘুরানো মাফিয়ারা অনেকেই চলে গেছেন পর্দার আড়ালে।

অন্যদিকে বিএনপির সাইনবোর্ডে সাদিকুল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন পুরো মাদক সাম্রাজ্যের। সদর উপজেলার শাহজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা, চর আলাতুলী ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু মাদক পাচারের চিহ্নিত রুটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আগের মতো সক্রিয় না হওয়ায় অপ্রতিরোধ্যভাবেই চলছে চোরাচালান ও কারবার।

সম্প্রতি সাদিকুলের নামে সদর মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে। এরপর গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দেন তিনি। আত্মগোপনে থাকায় বন্ধ আছে তার নিয়মিত ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বর। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে তার বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমন লোকের বিএনপি করার সুযোগ নেই। দলটি এখন জনগণের আস্থা অর্জনের যুদ্ধ করছে।

বিএনপির কারো বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জেলা বিএনপির সদস্য সেলিম চৌধুরী বলেন, সাদিকুল চিহ্নিত মাদক কারবারি। এতদিন তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় ছিলেন। পটপরিবর্তনের পর টাকা দিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ কিনেছেন। মাদকের গডফাদার বিএনপির নেতৃত্ব পাওয়ায় দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে।