
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ‘রকেট ফোর্স কমান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের আগ দিয়ে এমন ঘোষণা দিলেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই ফোর্স শত্রুকে ‘সব দিক থেকে’ আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন শাহবাজ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলার যে দর্শন এই জাতিকে একত্রিত করেছে, সেই চেতনা আজও পাকিস্তানের ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ‘চার্টার অব স্ট্যাবিলিটিতে’ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়, এটি শুধু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য নয় বরং জাতীয় স্বার্থের মূল ভিত্তি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা একতাবদ্ধ থাকবো, বাকি জায়গায় মতপার্থক্য থাকতেই পারে।
৭৮তম স্বাধীনতা দিবসে জাতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শাহবাজ শরিফ মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও দেশের প্রতিষ্ঠাতাদের ত্যাগকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের জন্ম ছিল শুধু মুক্তির নয় বরং দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিজয়ের প্রতীক। তিনি পাকিস্তানের স্থপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, কবি আল্লামা ইকবালসহ পাকিস্তান আন্দোলনের সকল নেতাকে শ্রদ্ধা জানান।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেন অল্প কয়েকজন মানুষই। তিনি এই দিনটিকে ‘মারকা-এ-হক’ বলে উল্লেখ করেন ও দাবি করেন, ভারত মিথ্যা অভিযোগে পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু চার দিনের মধ্যেই তাদের অহংকার ভেঙে পড়ে।
তিনি সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনিরসহ সাহসী সব কমান্ডারের প্রশংসা করে বলেন, তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অসিম মুনিরকে তিনি ‘জাতির মহান সন্তান’ বলে আখ্যায়িত করেন।
শেহবাজ শরিফ জানান, ২০২৫ সালের ১০ মে একটি নতুন পাকিস্তান আত্মপ্রকাশ করেছে, যা যেকোনো শত্রুর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, পাকিস্তান বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ও একমাত্র ইসলামী পরমাণু শক্তি। ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে বিদেশি চাপ প্রত্যাখ্যান করায় তিনি নওয়াজ শরিফকে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নয় বরং প্রতিরক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, আজারবাইজান ও ইরানের সমর্থনের জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় ‘ইতিবাচক ভূমিকার’ প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প কাশ্মীর সংকট সমাধানে সহায়তা করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপত্যকাটি নিরীহ মানুষের রক্তে লাল হয়ে আছে। তিনি ফিলিস্তিনি ও কাশ্মীরিদের ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের অক্লান্ত সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি জানান, এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৯০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে সেনা সদস্য ও সাধারণ মানুষ উভয়ই রয়েছে। তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার স্বীকার করলেও সহিংসতা ও বাধা সৃষ্টির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘ব্যাটল ফর ট্রুথ’ শীর্ষক একটি ডিজিটাল স্মৃতিসৌধ উন্মোচন করেন। পাঁচটি প্রতীকী খোপে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সাইবার ও মহাকাশ প্রতিরক্ষার প্রতীক তুলে ধরা হয়।
ইসলামাবাদের জিন্নাহ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, আজারবাইজান ও তুরস্কের সামরিক প্রতিনিধি, আসিফা ভুট্টো জারদারি, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: সামা টিভি