Image description
 

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে অখণ্ড পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি গঠিত হয় এবং ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ গুণী বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের জীবনী লেখনি ও তাদের বক্তৃতার মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি অশ্রদ্ধা, অশালীন মন্তব্য আমরা কখনও শুনতে পাইনি। তৎকালীন ভারতবর্ষের কোনো নেতা একে অপরের প্রতি কোনো কটাক্ষ করে আক্রমণাত্মক আচরণ করেছে বলে মনে হয় না। ৩০ লাখ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের পরেও পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা সেনাবাহিনী প্রধানদের প্রতি তীর্যক বাক্য বানে জর্জরিতও করা হয়নি। সমালোচনা হয়েছে, তবে সেটা শালীনতা বজায় রেখে করা হয়েছে।

 

বলতে দ্বিধা নেই, শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্থানি নেতাদের প্রতি খারাপ ভাষার ব্যবহার করতে শুনিনি। আবার স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে রাজনীতি করার সুযোগসহ বাড়িঘর অর্থ-সম্পদ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানস কন্যা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মহান সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সম্মান জানিয়েছেন। এতে তিনি মানুষের হৃদয়ে সম্মানের জায়গাটা স্থান করে নিয়েছেন। বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। তার রত্নগর্ভা মা তাকে পেটে ধারণ করে জন্ম দিয়ে পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। যার প্রমাণ বেগম খালেদা জিয়ার বহুনির্বাচনী বক্তব্য ও সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকার। 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংগ্রামী মহাসচিব ক্লিন ইমেজের অধিকারী সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ভাঙার দৃশ্য দেখে ব্যথিত হয়েছেন। অপরদিকে শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমান এবং জিয়া পরিবারের সম্মানিত সদস্যদের সম্পর্কে যে কুরুচিপূর্ণ অহংকারের ভাষায় মন্তব্য করেছেন যা সাধারণ মানুষদেরকে আহত ও মর্মাহত করেছে। এসব ভাষাগুলো কোনো সভ্য ভদ্রলোক সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর মতো আসনে বসে মানহানিকর নোংরা কথা বলা সমীচীন নয়। মাওলানা মামুনুল হক গতবছর ৫ আগস্টের পর বেগম খালেদার জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, আমি প্রায় আধাঘণ্টা বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি একবারও শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এজন্য যে, বেগম জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনা যে সীমাহীন অত্যাচার মানসিক শারীরিক নির্যাতন এবং দয়াময়হীন নির্মম ব্যবহার করেছেন এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুটো কথা বলা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু সেটা তিনি করেননি। 

বাংলাদেশে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন বক্তৃতায় টকশোতে পরনিন্দা চর্চায় মেতে উঠেছেন। একে অপরকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। ফলে রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হচ্ছে। তৃতীয় পক্ষ ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে। জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ কথা বলেছেন, পরামর্শ নিয়েছেন। অথচ একটি দলের নেতৃবৃন্দ তার সম্পর্কে যে অযাচিত মন্তব্য করেছেন তা কখনও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি। এর ফলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নষ্ট হচ্ছে। কর্মীরাও হতাশ,ব্যাথিত ও মর্মাহত হচ্ছে। 

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় জনাব তারেক রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি তারেক রহমানকে জুলাই আন্দোলনের প্রধান নায়ক হিসেবে পরিগণিত করেছেন। তার বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনায় আন্দোলন সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার। আবার জামায়েত ইসলামের আমির অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বিএনপির মহাসচিব তাকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন সময় দিয়েছেন। এটাই রাজনৈতিক শিষ্টাচার। যে দৃশ্য অবলোকন করে জনগণ শান্তি অনুভব করেছে। ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সভাপতি গেছেন কুশল বিনিময় করেছেন। পারস্পরিক সোহার্দ্য সম্প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ সহনশীল ও গঠনমূলক রাজনীতি উভয় দলের কর্মীদেরকে ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। রাজনৈতিক নেতাদের আচরণ এবং মনোভাব একে অপরের প্রতি এমনটা হওয়া উচিত।

ভিপি নুর জুলাই বিপ্লবে বিভিন্ন দিক থেকে সাহায্যের জন্য  তারেক রহমান,সালাহউদ্দিন আহমেদ, তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরার হোসেনেক প্রশংসা করেছেন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন সব বিভেদ ভুলে একে অপরের ভালো কাজের প্রশংসা করা, যাতে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় থাকে এর জন্য প্রয়োজন দেশ প্রেম। দেশনেত্রী বেগম খালেদ জিয়াকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মাইনাস করার জন্য বিগত সরকার বহু চেষ্টা করেছে। তিনি দেশ এবং দেশের মানুষকে এত ভালবাসেন যা কখনো স্বৈরাচার সরকার সেটা করতে পারেননি।

কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া মহান ব্যক্তিটি সারা পৃথিবীর অহংকার আমাদের গর্ব ও জাতীয় সম্পদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সীমাহীন অত্যাচার নিপীড়ন শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছেন জনগণের কাছে তা কখনও কাম্য ছিল না। অথচ বেগম খালেদা জিয়া মহান সংসদে দাঁড়িয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূসক সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করে তাকে সম্মানিত করেছেন এবং মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ মহান সংসদে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্যে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে সম্মানিত করেছেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের অনেক পরিষ্কার ইমেজের সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। যেমন আমার দেখা ঢাকা-১৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুস সালাম (উপদেষ্টা বিএনপি চেয়ারপারসন)। তার আচার আচরণ ভদ্রতা শিষ্টাচার টকশোতে কথা বলা হাসিমুখে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময় ব্যবহারের মাধুর্যতা কারোর প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ নয় বরং মানুষের চিন্তা চেতনা ও গুণগতমানের পরিবর্তন আনয়নে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মোহাম্মদপুর থেকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ দূর করার জন্য শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সাংবাদিক রাজনীতিবিদ এমনকি ভিন্নমতের ব্যক্তিরাও তার অনুষ্ঠানে এসে তাকে ভালো কাজের সমর্থন জানিয়েছেন অংশগ্রহণ করেছেন পরামর্শ দিয়েছেন বক্তৃতা করেছেন। তিনি কারোর প্রতি কোনো কটাক্ষ করে কথা বলেন না। রাজনীতিবিদরা হবেন বহ্নি পোকার মতো। পোকামাকড় যেমন আলোর দিকে ধাবিত হয় তেমনি রাজনীতিবিদরা হবেন আলোকিত ব্যক্তিত্ব যাদেরকে দেখে জনগণ আকৃষ্ট হবে। জনাব আব্দুস সালাম হলেন সেই মহান ব্যক্তি যাকে দেখলে মানুষ আকৃষ্ট হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতাদের প্রতি জনগণ আকৃষ্ট হলে তার রাজনৈতিক জীবন সার্থক ও সুন্দর হবে।

রাজনীতিতে মতভেদ থাকবে তবে শত্রুতা নয়। আক্রমণ নয় বরং ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারের ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে পারলে রাজনীতিবিদরা বাস করবেন মানুষের হৃদয়ে। তাহলে পৌঁছানো যাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। হয়ে উঠবেন আপনি অবিসংবাদিত নেতা। বাস করবেন মানুষের মনের মনিকোঠায়। সার্থক ও সুন্দর হবে আপনার ধরার জীবন। আর ধন্য হবে জনগণ।