
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভারত ও পাকিস্তান- উভয় দেশের সঙ্গেই অপরিবর্তিত। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। তার বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যার কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেই পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জানান, ভারত যদি পাকিস্তানের পানির অধিকার অস্বীকার করে, তাহলে প্রয়োজনে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতেও পিছপা হবে না তার দেশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যেই ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘অপরিবর্তিত’ রয়েছে। মার্কিন কূটনীতিকরা ‘দুই দেশের প্রতিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির গত দুই মাসে দুইবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তিনি ভারতকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দেন এবং বলেন, এ ধরনের হামলায় ‘বিশ্বের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে এই প্রথম এমন পারমাণবিক হুমকির ঘটনা ঘটল।
মূলত ভারত একতরফাভাবে ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু তারপরও ভারত এই অবস্থানে অনড়। পাকিস্তানে এরই মধ্যে বিপর্যয় দেখা দিতে শুরু করলেও ভারত অবস্থান পরিবর্তন করেনি। তারই ধারায় মূলত আসিম মুনির ভারতের উদ্দেশে এই হুমকি দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির পুনরুল্লেখ করে জানান, সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার পর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য এক বিপর্যয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছিল ওয়াশিংটনের জন্য ‘খুবই গর্বের বিষয়।’
ট্যামি ব্রুস বলেন, আমরা একবার পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এমন এক সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছিলাম, যা ভয়াবহ আকার নিতে পারত। সে সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন।
ট্যামি ব্রুস আরও বলেন, আমরা জানিয়েছি, হামলা থামাতে কী ধরনের ফোনালাপ ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং কীভাবে দুই পক্ষকে বসিয়ে একটি স্থায়ী সমাধান তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গর্বের মুহূর্ত যে, সেক্রেটারি রুবিও, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এবং শীর্ষ নেতৃত্ব সেই সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
আসিম মুনিরের ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র কি পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা ও অস্ত্র বিক্রি বাড়াবে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- এমন প্রশ্নে ব্রুস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক অপরিবর্তিত রয়েছে। কূটনীতিকরা দুই দেশের প্রতিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী সংলাপ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সন্ত্রাসের সব ধরনের রূপ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। দুই দেশ সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে।
তিনি আরও যোগ করেন, অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের দুই দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করা সুখবর। এটি ভবিষ্যতের জন্য উপকারী হবে।