
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবির আয়োজিত প্রদর্শনী ঘিরে ‘মবের’ মুখে জামায়াতের সাবেক শীর্ষ নেতাদের ছবি সরিয়ে নতুন ফটোফ্রেম যুক্ত করেছে সংগঠনটি। বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আপত্তি ও ক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর, মঙ্গলবার রাতেই প্রদর্শনীতে যুক্ত হয় নতুন কিছু ছবি।
‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’—শিরোনামে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন করছে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
প্রদর্শনীতে প্রথম দফায় এমন কয়েকটি ছবি ছিল, যেখানে স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের ছবি স্থান পেয়েছিল। এসব ছবি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং বিক্ষোভ করে।
এ ঘটনায় ছাত্রশিবির ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান চলে, ফলে টিএসসি এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানান, আমরা ছাত্রশিবিরকে বলি যে ছবিগুলো সরাতে হবে। তারা সম্মত হয়, পরে আমাদের সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় ছবিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
ছবি সরিয়ে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমাদের আয়োজন নিয়ে কৃত্রিম কুতর্ক ও জনতা উত্তেজিত করে একটি মব পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে দেখি। কিন্তু একই সঙ্গে বাকশাল ও শাহবাগ আন্দোলনকে গণতন্ত্রবিরোধী মনে করি।
তিনি আরও লেখেন, শাহবাগ ছিল এক ধরনের মবতন্ত্রের উদাহরণ, যেখানে বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে নাটকীয় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আমাদের ফ্রেমে থাকা ব্যক্তিরা সেই বিচার প্রক্রিয়ার শিকার।
এস এম ফরহাদ দাবি করেন, বিচারিক রায়ের প্রতিটি ধাপে গুম, মিথ্যা সাক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান উপেক্ষা করে রায় প্রদান করা হয়েছে। এতে নিরপেক্ষ বিচার হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর, নতুনভাবে যে ছবিগুলো টানানো হয়েছে, সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য এবং মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলও বিষয়টি নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।