
বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ নেটওয়ার্কের মূল ব্যক্তি হিসেবে বহুল আলোচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবুর রহমান কীভাবে পালালেন? অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেনারেল মুজিব গত বছরের ৫ আগস্টের বেশ কিছুদিন পর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
পালানোর আগে তিনি আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের নজরদারিতে ছিলেন। সূত্রমতে, বর্তমানে জেনারেল মুজিব দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পেছনে জেনারেল মুজিবের যোগসূত্র রয়েছে। দিল্লিতে অবস্থান করা আরেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) আকবর এবং পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুলও তার সঙ্গে কাজ করছেন। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর পলাতক সাবেক ডিজিএফআই প্রধান আকবর একদিনের জন্য সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনার খুবই বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। আর্মড ফোর্সেস এবং পুলিশের মধ্যে ‘র’ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে তিনি এবং জেনারেল তারেক সিদ্দিক ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জেনারেল মুজিব বাংলাদেশে ‘র’-এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে চিহ্নিত। বিমান বাহিনীতে ‘র’-এর শ্যাডো রিক্রুটার হিসেবে কাজ করা স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামগ্রিক তদন্তে বেরিয়ে আসে সামরিক বাহিনীতে ‘র’-এর নেটওয়ার্ক ও জেনারেল মুজিবের সম্পর্ক। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে টানা ক্ষমতায় রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেন জেনারেল মুজিব ও তার নেটওয়ার্কের সদস্যরা। মুজিবের সহযোগিতায় বিভিন্ন বাহিনীতে ‘র’ একটি অবস্থান করে নিয়েছিল। এমনকি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকেও দুর্বল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালায় ‘র’।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জুলাই বিপ্লব চলাকালে সেনাবাহিনীতে ভারতপন্থি ক্যু করানোর জন্যও জেনারেল মুজিব আপ্রাণ চেষ্টা করেন। প্রথমে ২০২৪ সালের ২ আগস্ট এবং পরে শেখ হাসিনার পলায়নের পরদিন ৬ আগস্ট তিনি ক্যু করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সে দেশের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের ‘রেসকিউ মিশন’ সফল করার ক্ষেত্রেও জেনারেল মুজিব ও তারেক সিদ্দিকের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর সি-১৩০জে বিমানে করে বেলা ৩টা ৯ মিনিটে তেজগাঁওয়ের কুর্মিটোলা এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে দিল্লি যান।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, বিমান বাহিনীর চিহ্নিত ‘র’-এর এজেন্ট স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ গত বছরের ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার হন। ওই ঘটনার তদন্ত চলাকালেই তড়িঘড়ি করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব ময়মনসিংহ সেনানিবাসের আর্টডক (ARTDOC)-এর জিওসি হিসেবে বদলি হন এবং ওই দিনই আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপের হেলিকপ্টারে করে বদলি হওয়া স্থানে পৌঁছান। যে হেলিকপ্টারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব ময়মনসিংহ সেনানিবাসে পৌঁছান, একই হেলিকপ্টারে সেখানে কর্মরত জিওসিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। ওই ঘটনা ছিল নজিরবিহীন।
মুজিব ময়মনসিংহ সেনানিবাসেও আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের নজরদারিতে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তিনি ধোবাউড়া সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
একটি সূত্র জানায়, পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল এবং সেনাবাহিনীর কোনো একটি গ্রুপের সহযোগিতায় তিনি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জেনারেল মুজিবকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার এই পলায়ন ও বরখাস্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, একজন সামরিক অফিসার পালিয়ে গেলে আইন অর্থাৎ ম্যানুয়েল অব বাংলাদেশ মিলিটারি ল’ (MBML) অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে যদি কাউকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পাওয়া যায়, AWOL (Absent Without Leave) এবং পরবর্তীতে তাকে ‘পলাতক’ (Deserter) ঘোষণার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাকে দোষী সাব্যস্ত না করে শুধু অবসর দেওয়া হয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি শুধু সন্দেহজনকই নয়; বরং সামগ্রিক বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, যাতে এ সম্পর্কে আর কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত না হয়।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কিংবা ‘ডেজারটার’ ঘোষণাপূর্বক অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করতে হয়। এক্ষেত্রে কোর্ট অব ইনকোয়ারি গঠন করতে হবে। অ্যারেস্ট করে অভিযুক্তকে ‘কোর্ট মার্শাল’-এর মুখোমুখি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটা না করে তাকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়, যাতে আর কোনো তদন্ত না হয়। অথচ তার বিরুদ্ধে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সরিয়ে ক্যু ও সামরিক শাসন জারির প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
মুজিবের বিষয়টি গুরুতর, তদন্ত হওয়া উচিত : মেজর জেনারেল মুনিরুজ্জামান
বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান ছুটি ছাড়া সেনা অফিসারের অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে আমার দেশকে বলেন, ছুটি ছাড়া কোনো সেনাসদস্যের অনুপস্থিত থাকাটা খুবই বিরল ঘটনা। এটা বড় ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কোনো ঘটনা কারো ক্ষেত্রে ঘটলে সেনা আইনের অধীন দ্রুত তদন্ত কমিটি (কোর্ট অব ইনকোয়ারি) গঠন করে তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেনারেল মুজিবের বিষয়ে যা শোনা যাচ্ছে, তা খুবই গুরুতর বিষয়। তিনি কীভাবে পালিয়ে গেলেন, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত হওয়া উচিত।
ক্যু প্রচেষ্টা ব্যর্থ
শেখ হাসিনার পলায়নের পরদিন ৬ আগস্ট সেনাবাহিনীতে ক্যু করে সামরিক শাসন কিংবা জরুরি অবস্থা জারি করার একটি অপচেষ্টা করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব। সূত্র জানায়, এ প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সেনাবাহিনীর আরো কয়েকজন সেনা অফিসার। এদের মধ্যে ছিলেন ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, এনএসআইয়ের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন আল মোরশেদ, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) তাবরেজ শামস চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিনুল হক ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাইফুল আলম। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিচক্ষণতায় ওই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। জেনারেল মুজিব এর আগে ২ আগস্টও ক্যু করার প্রচেষ্টা করেছিলেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
গুম-ক্রসফায়ারসহ নানা অপকর্মের হোতা মুজিব
জেনারেল মুজিব ‘র’-এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে শুধু দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থাকেই নড়বড়ে করে দেননি, তিনি নানা অপকর্মের হোতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাপক দুর্নীতিও করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গুম, ক্রসফায়ার, আয়নাঘরের নির্যাতন ইত্যাদি।
মুজিব সম্পর্কে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া
র্যাবের অতিরিক্তি পরিচালক থাকাকালীন সব গুম ও ক্রসফায়ারের সঙ্গে মুজিব জড়িত ছিলেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি) তার ফেসবুক পোস্টে ‘বিজিবি, র্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ বিষয়ে মুজিবকে নিয়ে লেখেন : “যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিত, তা ছিল র্যাব-এ প্রেষণে থাকা আমাদের অফিসারদের দ্বারা সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অপহরণ ও হত্যা। তরুণ, ক্যারিয়ারমুখী অফিসারদের র্যাবে পাঠানো হতো, সেখানে কিছুদিন কাজ করে তারা এমন এক চরিত্র নিয়ে ফিরত, যেন তারা পেশাদার খুনি। একই প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও), নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিকদের মধ্যেও। আমি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চাইছিলাম তাদের সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হোক। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি আমার কথায় সম্মতিসূচক ইঙ্গিত দিলেন, এমনকি বললেন র্যাব জাতীয় রক্ষীবাহিনী থেকেও খারাপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবে রূপ নেয়নি।
কয়েক দিন পর আমি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও ডিজি এসএসএফ) মুজিবকে—যিনি তখন র্যাবের এডিজি (ADG) ছিলেন—ডেকে বলি যেন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (এখন মেজর জেনারেল) জিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আর যেন কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না ঘটে। কর্নেল মুজিব এ ব্যাপারে আমাকে কথা দেন এবং বিদায় নেওয়ার সময় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হয়। পরের কয়েক দিন পত্র-পত্রিকা লক্ষ করলাম, নতুন কোনো ক্রসফায়ারের খবর নেই—এতে মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। এরপর কর্নেল মুজিব একাধিকবার আমাকে এসে জানিয়েছিলেন, সত্যিই ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ঘটনা ঠিকই ঘটছে কিন্তু সেগুলোর খবর চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে যখন কর্নেল মুজিব র্যাব ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান, আর কর্নেল জিয়াÑযিনি আগে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেনÑনতুন ডিজি বেনজীর আসার সঙ্গে সঙ্গেই এডিজি র্যাব হিসেবে দায়িত্ব নেন।
এরপর আর্মি নিরাপত্তা ইউনিট (ASU) সূত্রে খবর পাই যে, কর্নেল জিয়া নিজের আবাসিক টাওয়ারে একজন গার্ড রেখেছেন, বাসায় অস্ত্র রাখছেন এবং পুরো ফ্ল্যাটে সিসিটিভি বসিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলা হয় গার্ড সরিয়ে নিতে, ক্যামেরাগুলো খুলে ফেলতে, বাসায় অস্ত্র রাখা থেকে বিরত থাকতে এবং অফিসিয়াল কোয়ার্টারে যে সামরিক নিয়মকানুন আছে, সেগুলো মেনে চলতে। পরবর্তীকালে তার আচরণ আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। ডাইরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (DMI) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জগলুল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে কর্নেল জিয়া কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের (ASU) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল তাকে আলাপের জন্য ডাকেন। পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল আমাকে জানান, জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন সে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে যার মস্তিষ্ক পাথর বা ইটের টুকর দিয়ে ঠাসা—বোঝানোর কোনো উপায় নেই।”
শাপলা গণহত্যা ও হলি আর্টিসান হামলা
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর যে বর্বরতম হামলা হয়, তারও পরিকল্পনাকারী ও অপারেশন পরিচালনার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন মুজিব। র্যাবের জিয়াউল আহসান সৃষ্টি হয়েছে মুজিবের হাতে। র্যাবের একটি সূত্র জানায়, মুজিবের কাছে জিয়াউল ছিল শিশু। যদিও জিয়াউলের নাম নৃশংসতার জন্য যতটা আলোচিত হয়েছে, চতুর মুজিবের নাম ততটা হয়নি। মুজিব নারায়ণগঞ্জের তুলারাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও ‘র’-এর স্বার্থে সব কাজ করেছেন। বিশেষ করে র্যাবে থাকাকালীন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নে লিপ্ত ছিলেন। তথাকথিত হলি আর্টিসান জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ নামক যৌথবাহিনীর যে অভিযান চালানো হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই মুজিব।
মুজিবের ঘুস-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ
দুর্নীতির অভিযোগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। দুদকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের ৩৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং তাদের নামে থাকা ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত ও পূর্বাচল এলাকায় থাকা ১০টি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছে। গত ৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। এছাড়া আদালত ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আরেকটি ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে একটি বাড়ি এবং সাভারে জমিসহ টিনশেড বাড়ি জব্দের আদেশ দেয়।
দুদক সাংবাদিকদের জানিয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মুজিবুর রহমান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার ব্যাংক হিসাবগুলোয় ঘুস-দুর্নীতির বিপুল টাকা জমা ও উত্তোলন হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মুজিবের দুর্নীতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং গত ১৬ মার্চ দুদকে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি জানান, জেনারেল মুজিব ডিজিএফআই, এনএসআই, ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডারসহ ডিজি এসএসএফ হিসেবে পাঁচ বছর সেনা সদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) এবং সর্বশেষ কমান্ড্যান্ট, অ্যার্টডক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ পদগুলো সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদ ব্যবহার করে তিনি সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। তার এই দুর্নীতির পরিমাণ কমপক্ষে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন জানান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবের নিউ ইয়র্কে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাট কেনার জন্য তিনি কমপক্ষে দুই মিলিয়ন ডলার বা ২৫০ কোটি টাকা সেখানে পাচার করেছেন। ঢাকার পূর্বাচলে তার জমির পরিমাণ প্রায় ২০ বিঘা। এছাড়া আর্মি গ্রিন সিটিতে ১০টি প্লটের বুকিং দিয়েছেন তিনি। ইসিবি চত্বরে মাটিকাটা ঢাকা সেনানিবাসসংলগ্ন বিজে টাওয়ারে তার ৯টি ফ্ল্যাট আছে। জেনারেল মুজিব ডিজি এসএসএফ থাকাকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে ঘুস নিতেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দামি ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়িও উপহার নেন তিনি।