
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ছাত্রদল নেতা তাওহিদুল আলম জিসান। জুলাই শহীদের তালিকায় তার নাম থাকলেও, তার মৃত্যু পারিবারিক দ্বন্দের জেরে হয়েছে উল্লেখ করে তার নাম বাদ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। রবিবার (৩ আগস্ট) রাতে মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। এদিকে তার মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের মামলা করেছে পরিবার।
তাওহিদুল আলম জিসান রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি ভুলতা ইউনিয়নের মাছুমাবাদ এলাকায়। তিনি দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুলাই ছুরিকাঘাতে খুন হন জিসান। ঘটনার পরদিন নিহত জিসানের বাবা আলমগীর মোল্লা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় জিসানের বন্ধু নাঈম ও তাঁর বাবা কামালের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
তবে চলতি বছর আলমগীর মোল্লা নতুন করে আদালতে আরও একটি সিআর মামলা করার চেষ্টা করেন। সেখানে প্রথম মামলার দুই আসামিসহ আরও ২৮ জনকে নতুন আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, নতুন তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যক্তি বাদীর ব্যক্তিগত বিরোধের শিকার। তাঁদের মধ্যে বিএনপি, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন।
প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, পূর্বশত্রুতার জেরে জিসানের ওপর হামলা চালানো হয়। তবে নতুন মামলায় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর ৬ নম্বর আসামি গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশে প্রথম ৯ জন আসামি মিলে জিসানকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।
জিসানের পরিবার ভাষ্য, সরকার চাইলেই জুলাই আন্দোলনে জিসানের সম্পৃক্ত থাকার ভিডিও, ছবি, বক্তব্য বা সহযোদ্ধাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পারত। কিন্তু সেটি না করে তাকে শহীদ ঘোষণার পর আবার বাদ দেওয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া বলেন, জিসান সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নির্মম আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন। অথচ আজ তার শহীদের স্বীকৃতিও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই।
জিসানকে ছুরিকাঘাত করার পর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বন্ধু ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদ ইসলাম অঙ্কন। প্রথম করা মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী ছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন মামলায় তাকে করা হয়েছে ৩ নম্বর আসামি।
এ বিষয়ে অঙ্কন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জিসানের বাবা এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করেন। আমাকে ডেকেছিলেন তার সঙ্গে থাকতে; কিন্তু তাঁর কাজ দেখে আর যাইনি। এ জন্য মামলায় আমার নামেও দেন।’
মামলার আরেক আসামি ভুলতা ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘যে ছেলে বাড়ির কাছে মারামারি করে মারা যায়, সেই মামলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় কীভাবে রূপ দেওয়া হয়? তা ছাড়া মামলার বাদী আলমগীর নিজেও আওয়ামী লীগ করতেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে জিসান থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল। একই পদে যেতে চাইত অঙ্কন। জিসানকে মাইনাস করতে পরিকল্পনা করে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতে তুলে দেয় সে।’