Image description
 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ (৭৫) নিজের চক্ষুদান করে গেছেন। একই সঙ্গে তার শেষ তিন ইচ্ছার কথাও পূরণ করা হয়েছে।

সোমবার (০৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে তিনটার সময় চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮নং রুম থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদের মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জানাজা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রটোকল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়নি।

 

২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির স্টাফ অফিসার মেজর শিহাব বলেন, ‘সেনানিবাসে তার জানাজা শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তিনি চক্ষুদান করেছেন, যা সন্ধানীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘শেষ ইচ্ছানুযায়ী গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি। বাদ এশা তার গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সাবেক সেনাপ্রধানকে ওনার বাবার পাশে দাফন করা হবে।’

 

এর আগে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে মৃত্যু হওয়া সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ নিজের শেষ ৩টি ইচ্ছার কথা বলেছিলেন।

মাসখানেক আগে সাবেক এই সেনাপ্রধান তার বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাহারকে এ ইচ্ছার কথা জানান। তার মৃত্যুর পর সেসব ইচ্ছার কথা এম হারুন-অর-রশিদের সেজো বোনের জামাতা ডাক্তার জহির গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেন। এরপর থেকে সাবেক সেনাপ্রধানের শেষ তিন ইচ্ছার কথা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।

চট্টগ্রাম ক্লাবে গেস্ট হাউসে ডাক্তার জহির গণমাধ্যমকে জানান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাহার তাকে ফোন করে প্রথম সাবেক সেনাপ্রধানের মৃত্যুর খবর জানান। তখন তিনি বলেছিলেন, মাসখানেক আগে হারুন তার শেষ ৩টি ইচ্ছার কথা বলেছিলেন।

ওই তিন ইচ্ছা হলো- ১) মৃত্যুর পর তার মরদেহ দাফন করতে যাতে দেরি না করা হয়, ২) পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার পাশে যেন তাকে দাফন করা হয় এবং ৩) মৃত্যুর পর তার মরদেহকে রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান দেওয়া না হয়।

ডাক্তার জহির বলেন, ‘আমি উত্তরে কর্নেল বাহারকে সাবেক সেনাপ্রধানের শেষ ৩টি ইচ্ছে তার সহধর্মিণী ও মেয়েকে জানাতে অনুরোধ করি।’

জানা গেছে, ডেসটিনির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় হাজিরা দিতে রোববার চট্টগ্রাম আসেন সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশিদ। পরে চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসের ৩০৮ নম্বর রুমে ওঠেন। সোমবার মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রাম আদালতে এম হারুন-অর-রশিদকে না দেখে তার আইনজীবীর আত্মীয়ের কাছে আদালতে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি জানতে চান।

এ বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের সেজো বোনের জামাতা ডাক্তার জহির বলেন, সোমবার সকালে হারুনের আইনজীবীর সহকারীরা তিনি কোথায় আছেন এমন খবর জানতে চেয়ে ফোন দেন। তখন আমি তাদের চট্টগ্রাম ক্লাবে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দিই। পরে কর্নেল বাহারের ফোনে জানতে পারি তিনি আর নেই।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবের আবাসিক কক্ষ থেকে এম হারুন-অর-রশিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার (০৩ আগস্ট) রাতে তিনি কক্ষটিতে ছিলেন। সোমবার সকালে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় কক্ষটি খুলে অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, এম হারুন-উর-রশীদের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত তিনি দেশের দশম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।