
ড. ইউনূস একপেশে চিন্তা চেতনায় জড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘ঐতিহাসক জুলাই গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যয় ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম।
বেগম সেলিমা রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা চেয়েছি বৈষম্য বিরোধী একটা প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা আমরা জনগণকে দিতে পারবো। কিন্তু আজকে এক বছর হয়ে গেল। এই এক বছরে আমরা দেখতে পেয়েছি, কোথায় যেন আমাদের সেই কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। সেই দানবীয় সুর, সেই স্বৈরসরকারের ক্ষমতার একক বলয় এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা। এই যে অবস্থান, এটা কেমন করে এলো? মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে বিক্রি করে, মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদেরকে করে যে আওয়ামী লীগ এতদিন স্বৈরশাসন চালিয়েছে, ঠিক একইভাবে আজকে গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব একটি দল নিয়ে যাচ্ছে।
অন্তবর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি যদি কাউকে দোষারোপ করতে চাই, তিনি হলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস। তাকে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টে আমরা নিয়ে এসেছিলাম, আমরা মনে করেছিলাম- তিনি সুন্দরভাবে দেশটা পরিচালনা করবেন। তিনি নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি জড়িয়ে গেলেন একটা একপেশে চিন্তা চেতনায়। তিনি নতুনভাবে একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেন এবং সেই সৃষ্টি করার কারণে আজকে দল মত নির্বিশেষে সকল জনগণ বিক্ষুব্ধ। এই বিক্ষুব্ধতা আমরা আর চাই না। আমরা বলতে চাই, আমাদের আবারো সংগ্রাম করার সময় এসেছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কালকে জুলাই সনদ ঘোষণা হবে। এই ঘোষণার পরবর্তীতে আমরা কোথায় কী অবস্থায় দাঁড়াবো এবং সেখানে তার পরবর্তী কী অবস্থান, সেটা কিন্তু আমরা এখনো বলতে পারছি না। এই মুহূর্তে দরকার একটা জনগণের সরকার। যে সরকার জবাবদিহির মাধ্যমে দেশের বর্তমান যে বিশৃঙ্খলা অবস্থা, তা ঠিকমত আয়ত্তে আনতে পারবে।
বিএনপির এ নেত্রী বলেন, আমার জনগণ আজকে বিভিন্নভাবে বিক্ষিপ্ত, ক্ষুধার্থ। শ্রমিকরা যে মারা গেছে (আন্দোলনে), সেই শ্রমিকদের কোনো কথা নেই। কয়েকজন ছাত্র তারাই শুধু বলছে, ‘আমরা এই করছি, আমরা সেই করেছি’। কিন্তু তার পিছনে যে বিশাল জনগণ ছিল, বিশাল জনতার যে শক্তি ছিল, সেই জনতার শক্তিকে তারা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইনটেরিম গভর্নমেন্ট ড. ইউনূসকে বলবো, আপনি অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে জনগণের সরকারের হাতে তুলে দিয়ে আপনি সম্মানের সাথে এ দেশ থেকে চলে যান। তা নইলে বাংলাদেশের জনগণ সংগ্রাম করতে জানে। আবারো সংগ্রাম করে আবারো একত্রিত হয়ে আমরা সেই বাংলাদেশের যে স্বপ্ন সে স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো।
গণফোরামের সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি নুরুল আম্বিয়া, ভাষানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ মাসুম।