Image description
 

যাতায়াতের জন্য আমাদের প্রায়ই গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। আর বাস, লেগুনা, অটোরিকশা ইত্যাদি গণপরিবহনে নারী-পুরুষের বসার জন্য সাধারণত স্বতন্ত্র সিটের ব্যবস্থা থাকে না। এতে পুরুষ যাত্রীরা অনেক সময় বেগানা নারী যাত্রীর পাশের সিটে শরীর ঘেঁষে বসে পড়েন। আবার কোনো কোনো সময় নারী যাত্রী বেগানা পুরুষ যাত্রীর গা ঘেঁষে বসে যান। এতে দুজনেরই শরীর স্পর্শ হয়ে থাকে।

অনেক নারী-পুরুষ এই বিষয়টিকে খুব সহজভাবে দেখেন। তারা মনে করেন, এটাতে তেমন কোনো পাপ হবে না। কিন্তু ইসলামে নারীর জন্য পরপুরুষের স্পর্শ এবং পুরুষের জন্য পরনারীর স্পর্শ শক্তভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে শরিয়তের নির্দেশনা নিয়ে কথা বলেছেন দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজিল ও জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি মাওলনা হেলাল আসহাব কাসেমি। তার পরামর্শ ও আলোচনা তুলে ধরেছেন আবু তালহা রায়হান

পরনারী-পরপুরুষকে স্পর্শ করা ইসলামে নিষিদ্ধ

 

মুফতি হেলাল আসহাব বলেন, ‘ইসলামে পরনারীকে স্পর্শ করার বিষয়টি শক্তভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চোখের জিনা হলো (হারাম) দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হলো (গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক) কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। জিহ্বার জিনা হলো (গায়রে মাহরামের সঙ্গে সুড়সুড়িমূলক) কথোপকথন। হাতের যিনা হলো (গায়রে মাহরামকে) ধরা বা স্পর্শকরণ (সহিহ মুসলিম : ২৬৫৭)।’

 

অন্য হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য কারও মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেওয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভালো, যে তার জন্য হালাল নয় (তাবারানি : ৪৮৪)।’

 

এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ, রাসুল (সা.)-এর হাত কখনোই কোনো বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেনি। তিনি কথার মাধ্যমে তাদের বায়াত করাতেন (সহিহ মুসলিম : ১৮৬৬)।’

এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি আসহাব কাসেমি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো সিট খালি থাকলে নারীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য সিটে বসা অথবা দাঁড়িয়ে থাকা। আর অন্য সিট খালি না থাকলে অথবা কোনো অসুবিধার কারণে যদি পরনারীর পাশে পরপুরুষ অথবা পরপুরুষের পাশে পরনারী বসতেই হয়, তাহলে দুই সিটের মধ্যখানে কোনো কিছু রেখে কিংবা এই পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখা; যাতে একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনের শরীর স্পর্শ না হয়।’

উল্লেখ্য, পরনারীর শরীর ঘেঁষে বসা পুরুষের পক্ষ থেকে যেমন জায়েয নেই; নারীদের পক্ষ থেকেও তেমন জায়েয নেই। এতে কোনো ধরনের অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাই সিট খালি না থাকলে পুরুষের জন্য উত্তম হলো, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নারীদের বসার সুযোগ করে দেওয়া। আর নারীদের জন্য উচিত হলো, গাড়িতে উঠার আগে খেয়াল করা যে, এই গাড়ি তার জন্য সুবিধাজনক কি না।’