
জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসন । ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন ইতোমধ্যে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জনসম্মুখে জানান দিচ্ছেন। মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে রীতিমতো গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ আসনে বিএনপির ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন- দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহমদ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সানোয়ার হোসেন দিপু এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী অ্যাড. ওবায়দুল হক সরকার বাবলু।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার প্রচার করছেন। তারা বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন । সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরোদমে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত ১৫ বছরে তাকে ২৭টি মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বার জেলে পাঠিয়ে অমানসিক নির্যাতন করেছিল। তিনি বলেন সবকিছু বিবেচনা করে ‘দল আমাকে সঠিক মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস রাখি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিংকন বলেন, আমার মরহুম পিতা আব্দুল মোত্তালিব আকন্দ এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলাম। মরহুম পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে এ আসনের সাধারণ ভোটাররা আমাকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ বলেন, গোবিন্দগঞ্জে দলীয় কর্মসূচি পালন করায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকবার আমার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে। অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের কর্মীদের আগলে রেখে সর্বদা দলের পাশে থেকেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে দল আমাকে সঠিক মূল্যায়ন করবে বলে আশা রাখছি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিগত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফারুক কবির আহমদ বলেন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সব সময় রাজপথে সরব ছিলাম। বিগত ২১ বছর বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গোবিন্দগঞ্জের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি-তাই আমি আশাবাদী দল আমাকে এর মূল্যায়ন করবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন দিপু বলেন, বিএনপির সর্বস্তরের কর্মীদেরকে নিয়ে দলের কর্মসূচিতে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের দল তাকে নিরাশ করবে না বলেও জানান তিনি।
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আয়কর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক সরকার বাবলু জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে তাকে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রেখে ছিল। গোবিন্দগঞ্জ বিএনপির যেসব নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছিল- তাদের জামিনের ব্যাপারে ঢাকা হাইকোর্টে ব্যাপক আইনি সহায়তা করেছেন তিনি। দল কাজের মূল্যায়ন করে তাকে মনোনয়ন দিবে বলে আশাবাদী তিনি।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী গাইবান্ধা জেলা কমিটির সাবেক আমির ডা. আব্দুর রহিম সরকার। তিনি ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় ঐক্যজোটের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী হিসেবে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় প্রতিদিনই পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ডা. আব্দুর রহিম সরকার আমার দেশকে জানান, সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম তুহিন আমার দেশকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন তিনি। নির্বাচনে হাতপাখা জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
তবে এনসিপি, জাতীয় পার্টি এবং বাম সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।