Image description

 

সম্প্রতি পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের প্রোপাগান্ডা পোর্টাল BD Digest "মহেশখালীতে জাতীয় নারই ফুটবলার পারভীন সুলতানার পায়ের রগ কেটে দিল উগ্রবাদীরা" শিরোনামে একটি পোস্ট করে, যেখানে বলা হয় কথিত মৌলবাদীরা প্রমিলা ফুটবল দলের স্ট্রাইকার পারভীন আক্তার পারুলের পায়ের রগ (মেডিকেল পরিভাষায় যাকে Tendon বলা হয়) কেটে দিয়েছে। পরবর্তীতে 'বার্তা বাজার' নামের আরেকটি পোর্টাল যা ইতোমধ্যেই 'ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা' করার জন্য পরিচিত, সেখান থেকে নাম উল্লেখ না করে বিডিডাইজেস্ট এর রেফারেন্স দিয়ে "অনূর্ধ্ব ১৯ নারই ফুটবলার পারভীনের রগ কেটে দিলও উগ্রবাদীরা" শিরোনামে একই সংবাদ পরিবেশন করা হয়।

বার্তাবাজার এর ফটোকার্ড পরবর্তীতে "আলী রিয়াজদের সংস্কার এর গাছ ফুল-ফল দিতে শুরু করেছে!" ক্যাপশন দিয়ে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - বিএনপির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। তার পোস্টটি পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলে প্রচার করা শুরু হয় এবং একইসাথে বিডিডাইজেস্ট ও বার্তাবাজার এর পোস্টগুলোর মাধ্যমে জোরদার প্রচারণা চালানো হতে থাকে।

The Dacca টিম পরবর্তীতে এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পায়। প্রোপাগান্ডা আউটলেট বিডিডাইজেস্ট তাদের করা নিউজের প্রমাণ হিসাবে একটি ভিডিও আপলোড করে, যেটিকে আমরা "মহেশখালী বুলেটিন" নামক একটি লোকাল মিডিয়ার ভিডিও হিসাবে শনাক্ত করি। পরবর্তীতে অরিজিনাল ভিডিওটি খুঁজে বের করে বিশ্লেষণ করা হয়। পুরো ভিডিওতে পারভীন আক্তার পারুল এমন কিছু উল্লেখ করেন নি, যেখান থেকে প্রতীয়ময়ান হয় যে ফুটবল খেলার কারণে উগ্রবাদী কোন গোষ্ঠী তাকে আঘাত করেছে।

ভিডিওতে পারভীন আক্তার পারুল দাবি করেন যে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়িতে গেলে ১৪ এপ্রিল স্থানীয় কিছু ব্যক্তিবর্গ পূর্বশত্রুতার জের ধরে তার বাড়িতে হামলা করে। হামলার সময় পায়ে কোপ লেগে তিনি আহত হন এবং তার রগ কাটা যায় বলে তিনি জানান। এসময় মহেশখালী বুলেটিন এর সাংবাদিক তাকে ফুটবলার হওয়ার কারণেই পায়ে আঘাত করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি কোন উত্তর দেন নি, তবে বলেন যে এই ঘটনায় 'তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।'

নিজের বক্তব্যে পারভীন পারুল বেশ কয়েকজনকে দোষারোপ করেন, যাদের মধ্যে খুরশিদা আলম নামের একজন মহিলার কথা উল্লেখ ছিল। The Dacca টিম স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করলে জানতে পারে থানার আমাদেরকে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে হওয়া একটি মামলার কথা জানান যার মূল বাদী হলেন উল্লিখিত খুরশিদা বেগম। মহেশখালী থানায় পেনাল কোড ৩৪, ৩০০ ও ৩০৪ ধারায় দায়ের করা মামলায় বলা হয় যে জনৈক অমিত হাসান, কামরুল হাসান, হেলাল উদ্দিন ও আরো ব্যক্তিবর্গ ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রথমে পিটিয়ে এবং এরপর গুলি করে স্থানীয় মোহাম্মদ রশিদকে হত্যা করে। এ মামলার ৫ নং আসামী হলেন ফুটবলার পারভীন আক্তার পারুল।

স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে The Dacca টিমের প্রতিনিধি জানতে পারেন যে মামলার ১নং ও ২নং আসামী অমিত হাসান ও কামরুল হাসান স্থানীয় কালারমাছড়া এলাকায় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত। একইসাথে তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী তারেক বিন ওসমান শরীফ ওরফে তারেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করেন বলে তারা জানান। ১৫ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলা বাদেও তারা একাধিক হত্যামামলার আসামী। উল্লিখিত অমিত ও কামরুল একইসাথে ফুটবলার পারভিন আক্তারের ভাই।

স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বললে তারা জানায় যে পারভীন আক্তার পারুলের রগ কাটার মত কোন ঘটনা প্রকৃতপক্ষে ঘটে নি। বরং তাদের মতে, খুনের ঘটনা আড়াল করতেই পারভীন 'মিডিয়া ট্রায়াল' এর সাহায্য নেন বলে তারা দাবি করেন।

'এখন টিভি'র স্থানীয় প্রতিনিধি জানান যে খুনের ঘটনার পর পারভীনের ভাই কামরুল হাসানকে এলাকাবাসী ধরতে আসলে তখন দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেসময় পারভীনের পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হলে তার পা থেঁতলে যায়, এতে তিনি সাময়িকভাবে হেঁটে চলতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তবে রগ কাটার কোন ঘটনা ঘটে নি বলে তিনি জানান।

The Dacca-র স্থানীয় প্রতিনিধি এ ব্যাপারে পারভীন আক্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে পারে নি। অন্যান্য মিডিয়ার সাংবাদিকরাও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।

পারভীন আক্তার পারুল উক্ত দায়ের হওয়া মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন বলে The Dacca নিশ্চিত করেছে।

Investigation by The Dacca