
জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সেদিনই তো আমি চলেই গিয়েছিলাম। দ্বীনের পথে লড়তে চাই জীবনের শেষ পর্যন্ত। আর বিদায় নিতে চাই শহীদ হয়ে। রক্তের চাদর গায়ে দিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই। বলতে চাই, ইয়া মাবুদ বাংলাদেশকে তুমি কোরআনের শাসন দাও।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় চালনা বিল্লালিয়া আলিম মাদ্রাসা ময়দানের পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং শোকাহত পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি খুলনা আসেন।
বক্তৃতায় জামায়াতের আমির বলেন, মাওলানা আবু সাঈদ ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন। চব্বিশের আন্দোলনে আমাদের সন্তান আরেক আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। তোমার দ্বীন কায়েমের জন্য আর যত আবু সাঈদকে প্রয়োজন তুমি কবুল করে নাও।
তিনি বলেন, জালিম শাসকের আমলে আমাদের দুই দুজন আমিরসহ সারা দেশে যারা শহীদ হয়েছেন সবাইকে তুমি কবুল করো।
তিনি বলেন, গতকাল সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ইন্তেকাল করেছেন। ডাক্তাররা বলছেন আরও ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যারা হাসপাতালে আছেন আল্লাহ তাদের সুস্থ করে তুলুন। তাদের আপনজনের বুকে ফিরিয়ে দিন।
দাকোপ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মো. ওয়াহিদুজ্জামানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, খুলনা জেলা নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার, বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বাগেরহাট জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খুলনা জেলা কর্ম ও শূরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রব, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা শেখ মো. আবু ইউসুফ, চালনা বিল্লালিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা অজিহুর রহমান, পাইকগাছা উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ, কয়রা উপজেলা আমির মাওলানা মিজানুর রহমান, হরিণটানা থানা আমির আব্দুল গফুর, পাইকগাছা উপজেলা সেক্রেটারি মো. আলতাফ হোসেন, কয়রা উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ, রামপাল উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা জিহাদুজ্জামান, মোংলা পৌর যুব বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাইন প্রমুখ। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পথসভায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সকাল ১০টার দিকে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার চালনার বিএম গ্যাস কোম্পানির হেলিপ্যাডে অবতরণ করন। সেখান থেকে দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির শহীদ মাওলানা আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে তিনি চালনা সরকারি পৌর কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত করেন। দুপুরে বিএম গ্যাস কোম্পানির হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে আমিরে জামায়াত পাবনার ঈশ্বরদীতে শহীদ মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ির উদ্দেশে দাকোপ ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গার চৌরাস্তা মোড়ে শনিবার (১৯ জুলাই) রাত পৌনে তিনটার দিকে রয়্যাল পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ (৫২) মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হন জামায়াত কর্মী মো. আনিসুর রহমান ও মো. ইকবাল হোসেন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে চালনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।