
সারা বাংলাদেশে যাই হোক সেটা নিয়ে শেখ হাসিনার তেমন যায় আসে না। কিন্তু গোপালগঞ্জ নিয়ে তার যায় আসে। সেই কারণে দফায় দফায় হুশিয়ারি দিচ্ছেন, গোপালগঞ্জে কিছু হলে খবর আছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে একটি ভিডিও বার্তায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘গোপালগঞ্জে হরতাল ছিল। আবার রাতে বিচ্ছিন্ন কিছু গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে খুব হাস্যকরভাবে, কোন শোডাউন নাই। হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামলীতে একটা বাসে, তারপরে চট্টগ্রামে কিছু জায়গায় এমন করা হয়েছে। কারণ কি? গোপালগঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘আগের কয়েকবার যেমন সামরিক বাহিনীর গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদেরকে খুন করা হয়েছে এবং হামলা চালানো হয়েছে। গোপালগঞ্জের মাটিতে বিরোধী দল বা অন্য মতের কেউ যেহেতু ঠাই পায় না, তাই তাদের (আওয়ামী লীগ) আশা-ভরসা এখন সেই গোপালগঞ্জ।
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, ‘বরং সেখানে সারাসি অভিযান চলছে। ৬ হাজার আসামী এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে যারা তীর, বল্লম, লাঠি-সোটা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাপায় পড়ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জে এরকম অস্বাভাবিক অবস্থা অনেকদিন থেকে, প্রায় এক বছর। ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর এবং শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালায় যাওয়ার পরও গোপালগঞ্জে কিন্তু তার ঢেউ ওঠেনি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে সেখানে একটা অন্য পরিস্থিতি।’
তিনি বলেন, ‘এনসিপির যেই অনুষ্ঠানকে ঘিরে এত সংঘাত, সেই অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে বা তাদের কর্মসূচির প্রতিবাদে তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তিপূর্ণ একটা বিশাল শোডাউন করতে পারতো। কিন্তু তারা শোডাউন করেনি। বরং গ্রামগঞ্জ থেকে লোকজন জড়ো করছে। প্রথম আলোর খবরে দেখা যাচ্ছে, গ্রামগঞ্জ থেকে লোকজন জড় করে তারা বিভিন্ন অলিতে গলিতে ছড়িয়ে দিয়েছে। যাতে চতুর্মুখী বা একেবারে সারাসি আক্রমণ চালাতে পারে এবং করছেও তাই। ফলে এমন পরিস্থিতির কারণে সেনাবাহিনী বলছে, তারা আত্মরক্ষার্থে বল প্রয়োগে বাধ্য হয়েছে। এখন সেই শেখ হাসিনা পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু তিনদিনের মাথায় তিনি (শেখ হাসিনা) আবার বক্তব্য দিচ্ছেন, অডিও বার্তা দিচ্ছেন। বলছেন যে, ধৈর্য ধরুন দিন ফিরবে। সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেবেন, দিল্লিতে বসে থেকে এই হুমকি দিচ্ছেন অডিও বার্তায়। মানে এটা এক ধরনের থ্রেট যে, তিনি ফিরবেন। তখন হিসাব বুঝে নেবেন। তিনি আবার বলছেন, ইউনূসের ক্ষমতা দখল হয়েছিল জঙ্গিদের সহায়তায়। তিনি কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষকে জঙ্গি বানিয়ে দিচ্ছে। এটাই তার অভ্যাস। তিনবারের জালিয়াতির নির্বাচন করে যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের মুখে এরকমই কথা মানায়।’
তিনি বলেছেন, ‘হাসিনা বলেছেন ইউনূস সরকার ক্ষমতা দখল করেছে জঙ্গিদের সহায়তায়। আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ যেসব জঙ্গী সংগঠনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ক্ষমতায় এসে তাদের সকলকে ছেড়ে দিয়েছে। হাসিনার দাবি, ইউনূসের আমলে এক সুনিপুণ পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তা, স্বাধীনভাবে কথা বলা, স্বাধীনভাবে চলাফেরার পরিসর কেড়ে নেয়া হয়েছে। কিন্ত হাসিনার আমলে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালাইছে। আয়নাঘরে ঠাঁই হইছে। কারাগারে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়েছে।’
হাসিনা দাবি করেন, তার আমলে সবাই তার সমালোচনা করতে পারত, নির্ভয়ে কথা বলতে পারত কিন্তু এখন কেউ সমালোচনা করতে গেলে জঙ্গি বাহিনী দিয়ে তাকে মারধর করে নির্যাতন করে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তিনি তো আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ কাউকে যার যার পেশায় থাকতে দেননি। প্রত্যেকে ক্যাডার বানাইছে। তো তাদের এখন পরিণতি তাই হচ্ছে বলে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ মন্তব্য করেন।