Image description

ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর নিহত সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহের খণ্ডিত অংশ (হাঁড়-মাংস) এখনো ভারতেই রয়েছে। বিভিন্ন ঘটনা ও আলামত থেকে তার মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা করা হলেও সরকারিভাবে তা স্বীকৃত ছিল না। দীর্ঘ সাত মাস পর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে ভারত সরকার নিশ্চিত করে সেখানে উদ্ধার হওয়া মানবদেহের টুকরো অংশ ওই সাবেক এমপির।

এখন প্রশ্ন আসছে- আনারের উদ্ধার হওয়া ওই সব দেহাংশের কী হবে? এগুলো কি দেশে আনা হবে, নাকি সেখানেই দাফন করা হবে?

আনার পরিবার কী ভাবছে, বিদেশে খুন হওয়া ব্যক্তির এ-রকম খণ্ডিত দেহাংশ দেশে আনার প্রক্রিয়ায় বা কী- এসব বিষয়ে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে নিহতের পরিবার-স্বজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্যের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, তার দেহাংশ ভারত থেকে দেশে এনে কবরস্থ করার মতো অবস্থায় নেই পরিবার। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই তার পরিবার কিছু ভাবছে না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের অনুকূল হওয়ার অপেক্ষা করছে তারা। এ ছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে কবরস্থ করলেও আপত্তি নেই তাদের।

আওয়ামী লীগের এই সাবেক সংসদ সদস্য গত বছরের ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান চিকিৎসার কথা বলে। তবে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে এবং এই চক্রের সঙ্গে কোনো মতবিরোধে তিনি খুন হন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর হয় তখন।

আনোয়ারুল আজীম আনার যেদিন ভারত যান, সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন তার বাড়িতে। পরদিন দুপুর দেড়টার দিকে গোপালের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং সন্ধ্যায় ফিরবেন বলে জানান। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির একজন কর্মকর্তা দেশটির গণমাধ্যমকে জানান, ডিএনএ রিপোর্ট নিশ্চিত করেছে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের সুয়ারেজ লাইন ও শহরের একটি খাল থেকে উদ্ধার হওয়া মানবদেহের টুকরো ও হাড়গুলো বাংলাদেশের সাবেক এমপির। ভারতের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দুটি নমুনা পাঠানো হয়েছিল। দুটির ডিএনই মিলেছে। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেয়ার জন্য আনারের স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ও ভাই এনামুল হককে ডাকা হলেও কেবল তার মেয়েই কলকাতায় গিয়েছিলেন।

যেভাবে দেশে আনা যেতে পারে আনারের দেহাংশ

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আনার যে ভারতে মারা গেছেন তার একটা সার্টিফিকেট দেশটির হাসপাতাল থেকে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি পারিবারিকভাবে আনা হয়, তাহলে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। এরপর দূতাবাস দেশটির সঙ্গে কথা বলে মরদেহ আনবে। এ ক্ষেত্রে এক্সিট পারমিশন (দেশত্যাগের অনুমতিপত্র) লাগবে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উনি (আনার) তো বৈধ পাসপোর্টে দেশটিতে গেছেন। এক্ষেত্রে মরদেহ ফেরত আনতে কোনো সমস্যা হবে না। শুধু পরিবারকে উদ্যোগী হতে হবে। আর আনারের ঘটনাটি ক্রিমিনাল কেস, তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটাতে কাজ করবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উপদেষ্টার একান্ত সচিব) সারওয়ার আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আনারের ঘটনা ক্রিমিনাল কেস বলে ভারতে আমাদের হাইকমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে। যেহেতু আনারের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে, তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হবে এতে।’

এদিকে অন্য একটি সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানায়, আনারের দেহাংশ ভারতে কবরস্থ করতে হলেও পরিবারের অনুমতি লাগবে। সাবেক এই সংসদ সদস্যের পরিবার এ ব্যাপারে অনুমতি দিতে পারে বলে জানায় সূত্র।

যা বলছে আনারের পরিবার

বাবা নিখোঁজের ঘটনায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সর্বশেষ গেল নভেম্বরে ভারতে যান ডরিন। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন তিনি।

বাবার দেহাংশ দেশে আনার বিষয়ে পরিবার কী ভাবছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডরিন।

তবে আনারের একজন স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আনারের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে তার পরিবার এখনই কিছু ভাবছে না। তবে ধারণা করছি, বর্তমানে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সমর্থক পরিবারটি, তাতে আনারের পরিবার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে ভরসা পাচ্ছে না। হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা (দেহাংশ) দেশে আনা হতে পারে।’

এখন কোথায় আনারের পরিবার

ডরিনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকাটাইমস আরও জানতে পেরেছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আনোয়ারুল আজিম আনারের পরিবারের কেউ গ্রামে যাননি। আওয়ামী লীগের এই সাবেক এমপির বাড়িতে হামলা চালায় জনতা। এ সময় তার বাসভবনের সামনের অংশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় তার পরিবারের কেউ সেখানে ছিলেন না।

এরপর থেকে তাদের কেউ আর বাড়িতে যাননি। আনারের বড় মেয়ে অরিন পরিবারসহ গাজীপুর থাকেন। আর ছোট মেয়ে ডরিন ও স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। ঢাকার ন্যাম ভবন থেকে আসবাবপত্র বের করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় তাদের। জনসমক্ষে এলে হামলার শিকার হওয়ার ভয়ে আছেন আনারের পরিবার।

আনার হত্যায় গ্রেপ্তার যারা

আনার নিখোঁজের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাকে ‍খুন করা হয়েছে। এই কিলিং মিশনের প্রধান তারই বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন বিদেশে পালিয়ে যান। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া নয়জনের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবুসহ সাতজন কারাগারে আটক। অন্য পাঁচজন হলেন- শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সিলিস্তা রহমান, ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর রহমান।