
সরকারি সম্পদ ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। দলীয় পরিচয়ধারী এক বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা সরকারি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা।
গতকাল বুধবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ এলাকায় এলজিইডির সরকারি গাড়িতে করে আসতে দেখা যায় ছাতক উপজেলার আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শংকর কুমার দাসকে। গাড়িটি ছিল জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি। শংকর কুমার দাস গাড়ি থেকে নেমে উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে যান এবং সেখানে মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ দল হলেও তাদের নেতারা নির্বিঘ্নে সরকারি গাড়িতে চলাফেরা করছে—এটা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শংকর কুমার দাস অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে ছাতক-দোয়ারাবাজার এলাকায় ভয়ভীতি, দমননীতি ও বিরোধী রাজনীতির ওপর দমন-পীড়ন চালানোর জন্য কুখ্যাত ছিলেন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়ে মাঠে নামার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জুলাই বিপ্লবের পর তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তাকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, ব্যবসায়ী হিসেবে গাড়িতে তুলেছি। দলীয় পরিচয় এখানে মুখ্য নয়।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি আসলে দলীয় নেতাদের প্রশাসনিক সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসনের একটি কৌশলমাত্র। তারা বলছেন, ‘ব্যবসায়ী’ পরিচয়ের আড়ালে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সোহেল মিয়া বলেন, ‘শংকর বাবু আ.লীগ সরকারের সময় ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন। আজ আবার তাকে দেখা যাচ্ছে সরকারি গাড়িতে ঘুরতে।’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ নিজেও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের অবাধ যাতায়াত থাকলেও অন্য দলের লোকজন প্রায়শই অবহেলিত হন।
স্থানীয়দের মতে, এভাবে একটি সরকারি দপ্তর দলীয় ক্যাম্পে পরিণত হওয়া দুঃখজনক। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—প্রশাসন কি সত্যিই নিরপেক্ষ, নাকি রাজনৈতিক নেতাদের ‘ড্রাইভার’ হয়ে গেছে?