
ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর রাজধানীর পল্লবীতে ‘ঝিলপাড়’ নামে অবৈধ বস্তি গড়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বস্তিতে ৪ শতাধিক ঘর ছিল। প্রতিটি ঘরের ভাড়া নেওয়া হতো ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৭৩টি প্লটসহ মিরপুরে প্রায় ৭০০ একর সরকারি জমি দখল এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইলিয়াস মোল্লাহ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মোজাম্মিল হোসেন, মনিরুল ইসলাম ও ফেরদৌস রহমান। দুদক সূত্র জানান, ইলিয়াস মোল্লাহর নিজের ও পরিবারের নামে আইয়াজ প্যালেস, শ্যামপুর, বিরুলিয়া ও সাভারে কয়েক শ বিঘা সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। বিরুলিয়ায় ৬০ বিঘার ওপর বাগানবাড়ি এবং একই জায়গায় ছেলের নামে পৃথক বাংলোবাড়ি রয়েছে। ইলিয়াসের নিজের নামে তিনটি গাড়ির তথ্যপ্রমাণও মিলেছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৭৩টি প্লট ও প্রায় ২৬ একর জমি, মিরপুর-১ নম্বরে জাতীয় চিড়িয়াখানার নামে বরাদ্দ প্রায় ২ একর জমি এবং মিরপুর-২ নম্বরে তুরাগ নদের অংশ ভরাট করে ২ শতাধিক বস্তিঘর গড়ে তোলার অভিযোগেরও সত্যতা মিলেছে।
অনুসন্ধানে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ৯ জুলাই নথিপত্রসহ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহকে তলব করা হলেও তিনি হাজির হননি। এর আগে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেছিলেন, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বক্তব্য না দিলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হাতছাড়া করবেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেবে কমিশন। ইলিয়াস মোল্লাহকে দেওয়া দুদকের উপপরিচালক মোজাম্মিল হোসেনের সই করা তলব নোটিসে নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, বিগত পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি, যানবাহনের মালিকানার কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের কপি এবং ব্যবসা/শেয়ার/বিনিয়োগের দলিল দুদকে আনতে বলা হয়।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। জানা যায়, ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন সময়ে ইলিয়াস মোল্লাহর রেকর্ডপত্র চেয়ে ব্যাংক, বিমা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে চিঠি দেয় অনুসন্ধান টিম। চিঠিতে ইলিয়াস মোল্লাহর স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ও চার সন্তানের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, গণপূর্ত কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মিরপুরে ৭০০ একর সরকারি জমি দখলসহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অনুসন্ধানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থসহ ৬ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৬০০ টাকা দেখিয়েছেন আয়কর নথিতে। রিটার্নে তিনটি গাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাঁর হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের হলফনামায় তাঁর আয় দেখানো হয় ৩ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিয়াস মোল্লাহর আয়ের বড় একটি উৎস ছিল দুয়ারীপাড়া। ১৯৮১ সালে মিরপুর সাড়ে ১১সংলগ্ন দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩টি প্লট জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মচারীদের বরাদ্দ দেয়। এসব প্লটের আয়তন পৌনে ২, আড়াই ও ৩ কাঠা। ওই জমি ওয়াক্ফ এস্টেটের বলে দাবি করলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওই জমি ইলিয়াস মোল্লাহ দখলে নেন। ১৯৯৬ সাল থেকে এসব জমি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। জমি থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বছরে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়া হতো। সেখানে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল বাবদ ও ভাড়ার নামে টাকা তুলতেন তিনি।