
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে এবং পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের দায় শিবির ওপর দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। এই পোস্টটি ‘মিথ্যাচার ও মানহানিকর’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) শিবিরের পক্ষে দলটির আইন সম্পাদক আরমান হোসেন এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
এতে বলা হয়েছে, নোটিশ গ্রহীতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রশিবির সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের মত আদর্শিক সংগঠনের যথেষ্ট মানহানি ঘটিয়েছেন যা দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৫০০ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি অপরাধ।
নোটিশে আগামী তিন দিনের মধ্যে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে ছাত্রশিবির ও জাতির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার কথা বলো হয়েছে। এমনটি না করলে লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ মোতাবেক ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলাসহ বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলেও জানানো হয়।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন তার দেওয়া পোস্টে অভিযোগ করে লেখেন, ‘ধর্মের নামে রাজনীতি করা শিবিরের ছেলেরা কুয়েটের বহিষ্কৃত, অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া যুবদল নেতাকে প্রথমে গুলি করে এবং পরে পায়ের রগ কেটে হত্যা নিশ্চিত করেছে। ৮০-৯০ দশকে শিবিরের হলমার্ক ছিল রগ কাটা।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘যা কিছু ঘটছে, সবই হলো নির্বাচনের পরে কী হবে তার প্রিকরসর বা নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশের ট্রেইলার।’
শিবিরের নোটিশের পর আজ বুধবার (১৬ জুলাই) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি, এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’
এর আগে গত শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে বাড়ির সামনে নিজের প্রাইভেটকার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন ব্যক্তি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এলাকায় বেপরোয়া আচরণ, দখল, জমি বিক্রির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয়ে নিহত মাহবুবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে এক চরমপন্থি নেতার আত্মীয় হওয়ায় এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির বিরোধেও একাধিক পক্ষের টার্গেটে পরিণত হন মাহবুব।