Image description

রাজধানীর চকবাজারে ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অবস্থান স্পষ্ট করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, “ঘটনাটি বুধবারের, কিন্তু ব্যাপকভাবে প্রচার পেল শুক্রবার। দুইদিন আগের ঘটনা কেন গতকাল প্রচার হলো? এর পেছনে কারা জড়িত, তা খুঁজে দেখা জরুরি।”

তিনি বলেন, “আমরা এক তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাজধানীর মতো জায়গায় দিবালোকে সোহাগকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নৃশংস ও সভ্যতাবিরোধী। এই বর্বরতার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এ ধরনের আদিম হিংস্রতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

মুন্না আরও জানান, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজে যাদের উপস্থিতি দেখা গেছে, তাদের বাদ দিয়ে মামলার এজাহারে অন্যদের আসামি করা হয়েছে। বাদীর মেয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনজন খুনিকে বাদ দিয়ে কৌশলে তিনজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রকৃত খুনিরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি? ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা জানতে চাই, কারা এই মামলা প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে, কেন করছে?”

তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা সংগঠনের পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। সাংগঠনিক জবাবদিহিতার জায়গা থেকে আমরা যা যা করা প্রয়োজন, সব করেছি। কিন্তু মূল খুনিদের বাদ দিয়ে তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জবাব চাই।”

আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, “আপনারা জানেন, গত ৫ আগস্ট আমরা এক দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান দেখেছি। ১৬ বছরের অত্যাচার, গুম, খুন, মামলা, নির্যাতনের পর আমরা স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরেছি। আন্দোলনের সময় আমাদেরই সর্বাধিক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শহীদের তালিকায় আমাদের নেতাকর্মীরাই অর্ধেকের বেশি। কিন্তু আমরা সেই রক্ত নিয়ে রাজনীতি করিনি। আন্দোলনের সফলতার পর আমরা সংগঠন গঠনে মনোযোগ দিয়েছি, ফেনীর ভয়াবহ বন্যাতেও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি।”

তিনি বলেন, “গতকাল নিহত যুবদল নেতার পরিবারের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদকরা পাশে ছিলেন। আমরা শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করছি। জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছি।”

তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আপনারা জানেন, গত এক বছরে যখনই অভিযোগ উঠেছে, আমরা নিজেরাই তদন্ত করে সত্যতা পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু প্রশাসন কি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, কেন নেয়নি? সেটাও আমরা জানতে চাই।”


চকবাজারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। সংগঠনগুলো দ্রুত বিচার ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, আসল খুনিদের বাদ দিয়ে কেন মামলাকে অন্যদিকে মোড় নেওয়া হচ্ছে?