Image description
রাজধানীর বারিধারায় হামলা লুটপাট । নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাসিন্দারা । বিএনপি নেত্রীর হয়ে কাজ করছে পুলিশ -দাবি ভুক্তভোগীর ।

মব সৃষ্টি করে ঢাকার অভিজাত বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় সাবেক স্বামীর ফ্ল্যাট দখলে নিতে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপি নেত্রী জেবা আমিন খান। দলীয় লোকজন ও কিছু হিজড়া নিয়ে গত ২৭ জুন তিনি এ হামলা চালান। জেবা আমিনের সাবেক স্বামী ক্যাপিটাল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক মোকাররম হোসেন খান ওই সময় কানাডায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে ৬ তলা বাড়ির ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাট দুটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান বাংলাদেশ মহিলা দলের এই সহসভাপতি। প্রায় ৮ বছর আগে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হলেও আইনের মারপ্যাঁচে জেবা আমিন ওই বাড়ির ৫০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি দখলে রেখেছেন আদালতের অনুমতি নিয়ে। মোকাররম হোসেনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে থানার সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। বাড়ি পাহারার জন্য নির্ধারিত দারোয়ান থাকলেও জেবা আমিন এখন বাড়ির গেটে দলীয় লোক বসিয়ে সর্বদা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন। এ নিয়ে কয়েক দফা থানায় অভিযোগ করার জন্য গেলেও পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে গত ৩ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

হামলা-ভাঙচুরের সময় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট হয়েছে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করায় এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন মোকাররমের মেয়ে মাহিরা হোসেইন খান। অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। তাদের অভিযোগ, বাসার নিচে সব সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা অবস্থান করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে তারা জীবন শঙ্কায় ভুগছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুন রাতে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় বারিধারা কূটনৈতিক জোনের ২ নম্বর ইউএন রোডের ৬ তলা বাড়িতে। তারা বাড়ির দারোয়ানকে মারধর করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে দুটি ফ্ল্যাটে হামলা চালায়। ওই ভবনের ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটে বাস করেন মোকাররম হোসেইন খান এবং ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে বাস করেন মোকাররমের মেয়ে ক্যাপিটাল ল্যান্ডের নির্বাহী পরিচালক মাহিরা হোসেইন খান।

জানা গেছে, মোকাররম হোসেইন কয়েকদিন ধরে স্ত্রী জাহান সুলতানা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে কানাডায় ছিলেন। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে প্রথমেই হামলাকারীরা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। ওই ভবনের দুটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। গৃহকর্মীদের মারধর করে জিম্মি করে রাখে। এরপর তারা দুই ফ্ল্যাটে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে নগদ টাকাসহ প্রায় ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় নারীদের শ্লীলতাহানি ও মারধর করে। কর্মচারীরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ রয়েছে যুগান্তরের কাছে। সেই সিসিটিভি ফুটেজে জেবা আমিনা ও তার সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে প্রবেশের দৃশ্য দেখা গেছে।

এছাড়া পুলিশের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে জেবা আমিনা খান নিজেই ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। মোকাররমের বাসার গৃহকর্মী নূপুর বেগম জানান, প্রথমে একজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা বাসায় ঢুকেই আমাদের মোবাইল নিয়ে নেয়। এমন সময় আরও অনেক লোক বাসার মধ্যে ঢুকে যায়। মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গলা টিপে ধরে, মারধর করে। পরে স্যারের রুম ভেঙে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমাদের দুজন গৃহকর্মীকেও নিয়ে যায়। পরের দিন তাদের ফেরত আনা হয়।

হামলাকারীরা প্রথমে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। ওই সময় বাসায় ছিলেন তিন গৃহকর্মী শিমু আক্তার, নূপুর বেগম, আছিয়া বেগম, ইলেকট্রিশিয়ান সোহেল রানা এবং ডগকিপার বাদলকে বেধড়ক মারধর করে জখম করে। পরে জানতে পেরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা কোনো হামলাকারীদের আটক না করে বরং দুটি ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে চলে যায়। পরে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে দেওয়া হলেও পুলিশ ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি দেয়নি।

এ বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী কারা? ভুক্তভোগী তো এখানে দুই পক্ষই। ভুক্তভোগী বলতে আপনি কাকে ট্রেস করছেন। এরপর বিস্তারিত তুলে ধরে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি আপনার সঙ্গে বিস্তারিত সাক্ষাতে কথা বলব, ফোনে নয়। ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি কি আপনাদের কাছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওনারাই থানা হেফাজতে রাখছেন। লিখিত আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলা-ভাঙচুরের খবর পেয়ে কানাডা থেকে গত ২৯ জুলাই মোকাররমের স্ত্রী জাহান সুলতানা ও মেয়ে মাহিরা দেশে আসেন। কিন্তু ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি মাহিরার কাছে না থাকায় তিনি ফ্ল্যাটে উঠতে পারছেন না। এছাড়া জাহান সুলতানা তার সন্তানদের নিয়ে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটে উঠলেও প্রতিনিয়ত জীবন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

ভুক্তভোগী জাহান সুলতানা বলেন, খবর পেয়ে আমি আমার মেয়ে মাহিরা দেশে চলে আসি এবং আত্মীয়ের বাসায় উঠি। জেবা আমিন বাড়ির নিচে মাস্তান বসিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যুবদলের লোকজন আসছে-যাচ্ছে। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা তখন দেশেই ছিলাম না। আমাদের দুটি ফ্ল্যাটে মব সৃষ্টি করে হামলা-ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হলো কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো অভিযোগ বা জিডি গ্রহণ করেনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জেবা আমিন খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। হাইকোর্টের অর্ডার মেনেই এখানে আমি থাকছি। কার ওপর হামলা করেছি, তারা তো তখন কানাডা ছিল। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা অসদাচরণ করলে কেউ রেহাই পাবে না। দলের সবাইকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ অপরাধ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আপনি যে ঘটনাটি বলেছেন সেটার বিষয়ে দল থেকে খোঁজখবর নেওয়ার পর বিস্তারিত ভালোভাবে জানা যাবে। তবে অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী, সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করলে কেউ রেহাই পাবে না। আমরা দলের পক্ষ থেকে সব অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করছি।