Image description

রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি রিজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপের অনিয়মের দায় খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত এপ্রিল মাসে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে এমনটাই জানা গেছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে টিউলিপসহ তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিলের সুপারিশ করা হয়েছে। 

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, গত কিছুদিনে গুলশানের ওই ফ্ল্যাট সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে তা তদন্ত করা হয়েছে। যেখানে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে দায়ের করা অভিযোগটির সত্যতা রয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ হয়। তাই সে অনুযায়ী অভিযোপত্র দাখিলের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজওয়ানা সিদ্দিক ওরফে টিউলিপ অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে রাজউক থেকে ইস্টার্র্ন হাউজিংয়ের নামে সেল পারমিশন গ্রহণ করে এবং রাজউক’র তৎকালীন সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ খসরুজ্জামান, সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ মোশাররফ হোসেন এবং আইন উপদেষ্টা ড. মো. সেলিম (যিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের আপন বড় ভাই)-এর মাধ্যমে প্রয়াত জহুরুল ইসলামের কন্যাদের লিখিত আপত্তি সত্ত্ব্বেও তাদের স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই না করে, এমনকি তাদেরকে কোনো নোটিশও প্রদান না করে তাদের স্বাক্ষরের সঙ্গে নথিতে পূর্বে রক্ষিত স্বাক্ষরের মিল নেই উল্লেখ করে ও ডিড অব রিভোকেশন অব পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল বিদেশে সম্পাদিত মর্মে অসত্য তথ্য উল্লেখ করে তাদের আবেদন অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের আইনগত মতামত প্রদান করে শাহ খসরুজ্জামান; ড. মো. সেলিম এবং সরদার মোশাররফ হোসেন অপরাধ করেছেন।

তদন্তকালে জব্দকৃত রিজওয়ানা সিদ্দিকের আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ২০০৬-২০০৭ করবর্ষে তার নামে আয়কর নথি খুলেছেন এবং ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্র্ন দাখিল করেছেন। ২০১৮-২০১৯ করবর্ষের পরে তিনি আর আয়কর রিটার্র্ন দাখিল করেননি। ২০০৬-২০০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৪-২০১৫ করবর্ষ পর্যন্ত তার আয়কর রিটার্নে অ্যাডভান্স টুওয়ার্ডস ডেভেলপারস হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা প্রদর্শিত আছে। কিন্তু তিনি তার নামে গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-কবলা দলিল নং-১৪০৭১, মূলে ফ্ল্যাটটি মালিক হয়ে ভোগদখলে থাকলেও তিনি ২০১৫-২০১৬ করবর্ষ পর্যন্ত তার আয়কর নথিতে উক্ত ফ্ল্যাটটি প্রদর্শন না করে ডেভেলপার কোম্পানিকে অগ্রিম বাবদ পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করেছেন মর্মে মিথ্যা তথ্য আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। টিউলিপ ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে ফ্ল্যাট নং-ই/২০১ ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিককে হেবা করা হয়েছে মর্মে প্রদর্শন করেছেন। আয়কর নথিতে দাখিলকৃত ডিড অব হেবা রেজি: নং-০১, তারিখ-২১-০৬-২০১৫ এর ফটোকপি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দলিলটি নোটারি পাবলিক কর্তৃক প্রত্যায়িত ছিল। কিন্তু ২০০৪ সালের রেজিস্ট্র্রেশন আইন অনুযায়ী নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কোনো স্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করা যায় না। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হলে অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি হতে হবে। 

দুদকের তদন্তকালে ওই  নোটারি পাবলিক হিসেবে প্রত্যয়নকারী প্রদর্শিত এডভোকেট গাজী সিরাজুল ইসলাম বক্তব্যে জানান- উল্লিখিত হেবা নামায় প্রদর্শিত স্বাক্ষরটি তার নয়। তিনি ২০১২ সালে নোটারি পাবলিক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। তিনি কোনো বাণিজ্যিক নোটারি পাবলিকের কাজ করেন না। অর্থাৎ অবৈধ উপায়ে অর্জিত বিধায় টিউলিপ ফ্ল্যাটটি তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে আয়কর নথিতে ডেভেলপারকে অগ্রিম হিসেবে পাঁচ  লাখ টাকা প্রদর্শন করে অবৈধ উপায়ে ফ্ল্যাটটি তার বোন আজমিনা সিদ্দিককে হস্তান্তরের অপচেষ্টা করেছেন।

তদন্তকালে গুলশানের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পাঠানো প্রতিবেদনে জানান টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের নামে তার অফিসে কোনো নামজারি হোল্ডিং/জোত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আসামি তার নামীয় উক্ত ফ্ল্যাটটির মালিক হলেও এখন পর্যন্ত তা নামজারি করেননি।

দুদকের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, টিউলিপের নামে  মামলার পর আইন অনুযায়ী তদন্তের কাজ চলমান। এরপর প্রতিবেদন জমা হলে তা কমিশন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেবেন। 
এর আগে গত ১৫ই এপ্রিল ঘুষের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলশানের ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে মামলা হয় টিউলিপের বিরুদ্ধে। সে মামলায় আরও দু’জনকে আসামি করা হয়। 

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ সালের ১৯শে মে থেকে রিজওয়ানা সিদ্দিকী টিউলিপ ও রিজওয়ানা সিদ্দিক ওই ফ্ল্যাটটি দখলে আছেন মর্মে সিটি করপোরেশনে চিঠি দেয় ইস্টার্ন হাউজিং। তিনি ২০০১ সালের ১৯শে মে থেকে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর গ্রহণ করে ওই তারিখ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন। প্লটটির সর্বসাকুল্য মূল্য ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা। গ্যারেজের মূল্য ৬ লাখ টাকার মধ্যে কোম্পানিকে মাত্র ২ লাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়েছে। তবে ওই ২ লাখ টাকা পরিশোধের কোনো মানি রিসিপ্ট তাদের কাছে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ওই ফ্ল্যাটটি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বিনামূল্যে রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন করে নেন।