Image description

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশেই বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি তৈরি করা হচ্ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। কিন্তু গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এখন সেখানেই থাকছেন আ.লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা। কারাগারের ভাষায়, এসব ভিআইপি হলেন বিশেষ বন্দি। এসব বন্দি কেমন আছেন-তা জানার আগ্রহ অনেকের। জানা গেছে, আদালতে যাওয়া-আসা; বই, পত্রিকা ও নামাজ পড়া, শুয়ে-বসে থাকা এবং হাঁটাহাঁটি করেই সময় কাটছে তাদের। প্রত্যেকেই একটি করে চেয়ার, টেবিল, বেড এবং পত্রিকা পাচ্ছেন। অন্য কারাগারে তারা টিভি দেখার সুযোগ পেলেও বিশেষ কারাগারে টিভি নেই। তাই টিভিসহ আরও বেশ কিছু সুবিধা চাচ্ছেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা এবং বিধি এলাউ না করায় এসব সুবিধা আপাতত তারা পচ্ছেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ কারাগারের কার্যক্রম শুরু হয় গত ২১ জুন। এদিন ৪৭ জন সাধারণ বন্দিকে এখানে স্থানান্তর করা হয়। এর একদিন পর ২৩ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৪ জন ভিআইপিকে এখানে স্থানান্তর করা হয়। এরপর গত ১ জুলাই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ১৬ জন এবং হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে আটজন ভিআইপি বন্দিকে আনা হয়। ধাপে ধাপে আরও বন্দি আনা হবে। অন্য কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ-তিনগুণ বন্দি থাকলেও এই কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি রাখার সুযোগ কম। এখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৩০০। এই মুহূর্তে এখানে আছেন ৯৫ জন। এর মধ্যে ভিআইপি বন্দির সংখ্যা ৪৮ জন। বাকিরা সাধারণ বন্দি। সাধারণ বন্দিরা ভিআইপি বন্দিদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ডে চারজন করে ভিআইপি বন্দি আছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের ওয়ার্ড থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো কিছু দরকার হলে সেবকদের মাধ্যমে সেগুলো বাইরে থেকে সংগ্রহ করছেন ভিআইপিরা। এখানকার বন্দিদের লাগেজের সংখ্যা বেশি। তুলনামূলক বয়স্ক বন্দি হওয়ায় তাদের অতিরিক্ত ওষুধও সেবন করতে হয়।

এসব ভিআইপি বন্দির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, আমির হোসেন আমু, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, নূরুল মজিদ হুমায়ুন, নুরুজ্জামান আহমেদ, আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ফরহাদ হোসেন, ডা. এনামুর রহমান, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক বিচারপ্রতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাবেদ ইকবাল প্রমুখ।

কারা সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান দিনের বেশির ভাগ সময় বই পড়ছেন। তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে ধর্মীয় বই। অনেক মামলা থাকায় দু-একদিন পরপরই তাকে আদালতে যেতে হচ্ছে। যেদিন তাকে আদালতে নেওয়া হয় সেদিন প্রায় পুরোটা সময় তাকে বাইরে থাকতে হচ্ছে। কারাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তার সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। তিনিও অন্য বন্দি এবং কারাসংশ্লিষ্টদের এড়িয়ে চলছেন। তবে মাঝে মধ্যেই নিজের চাহিদা অনুযায়ী অনেক কিছু দাবি করছেন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। সম্প্রতি তিনি কারা কর্মকর্তার কাছে তার রুমের জানালার জন্য নতুন পর্দা চেয়েছেন। পৃথক ওয়াশরুম, ওজুখানা এবং গোসলখানা চেয়েছেন। কিন্তু কারাবিধি এলাউ না করায় তার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কারা কম্পাউন্ডজুড়ে হাঁটতে চান সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে সেটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি যে ভবনে থাকেন সেখানে ওয়াকওয়ে আছে। সেখানে তাকে হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আতিকুল ইসলাম এবং আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব থাকেন একই রুমে। তারা হাঁটেন এবং ব্যায়ামও করেন একসঙ্গে। বই এবং পত্রিকা পড়ে বেশির ভাগ সময় কাটে তাদের।

জুনাইন আহমেদ পলক নিজের ওয়ার্ড থেকে খুব একটা বের হন না। কোমরে ব্যথা থাকায় সবসময় তিনি বেল্ট পরেন। মামলাজনিত কারণে তাকে ঘনঘন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। বইয়ের মধ্যে তার বেশি পছন্দ উপন্যাস। তিনি নিজের পছন্দের কিছু উপন্যাস বই চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ভেতরে চুপচাপ থাকেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অনেকে নানারকম দাবি করলেও তার কোনো দাবি নেই। সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল।

বেশির ভাগ সময় তিনি শুয়ে-বসে থাকেন। মাঝে মধ্যে রুমমেটদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে সময় কাটান। আমির হোসেন আমু কারাগারের ভেতর একেবারেই চুপচাপ থাকেন। শুয়ে-বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করেন না তিনি।

ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক হলেন রুমমেট। তাদেরও বেশির ভাগ সময় কাটে বই পড়ে। দুজনেরই পছন্দ আইনবিষয়ক বই। শাহজাহান ওমর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কথা বললেও মানিক কথা বলছেন খুব কম। অসুস্থ থাকায় তার চিকিৎসা চলমান। বই পড়া এবং হাঁটাহাঁটি পছন্দ ফরহাদ হোসেনের। তিনি কিছু নতুন বই চেয়েছেন। বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদ তার অধিক পছন্দ। লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। ডা. এনামুর রহমান কিছু দিন অসুস্থ ছিলেন। এখন তিনি সুস্থ। হার্টের সমস্যা থাকায় তিনি বেশির ভাগ সময় বিশ্রামে থাকেন। তিনি একেবারেই বাইরে বের হন না। জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির জানান, হাঁটাহাঁটি করেই সময় কাটছে ভিআইপি বন্দিদের। কারাবিধি অনুযায়ী যে ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা তাদের সে ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।