Image description
আনিসুুল চুন্নুকে বাদ দিয়ে পাটোয়ারীকে মহাসচিব

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে (জাপা) চলছে চরম অস্থিরতা। গতকাল মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেন পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ সিদ্ধান্তের পরপরই পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার যৌথ বিবৃতিতে জানান, এ নিয়োগ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। চুন্নু দলের বৈধ মহাসচিব। এমন বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে আসার পরপরই জি এম কাদের আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন। জি এম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ফের গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এর প্রতিবাদ করে বলেন, এটা জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের অপব্যবহার। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টিতে এখন চলছে অস্থিরতা।

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের অপব্যবহার ও নেতৃত্ব সংকটে : ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার যৌথ বিবৃতিতে বলেন, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন। এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মান হানিকর আচরণ। মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। জাতীয় পার্টি কারও ব্যক্তির নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পার্টি পরিচালিত হতে হবে। গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি। জাতীয় পার্টির ত্যাগী, আদর্শবান নেতা-কর্মীদের প্রতি আমাদের আহ্বান- এই অন্যায় ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। আসুন আমরা সবাই দলকে সুসংগঠিত করি, ব্যক্তিকে নয়, গঠনতন্ত্র ও ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনি।

আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুকে অব্যাহতি : জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ জুন তারিখে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুকে দলীয় সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জানা যায়, বারবার ভাঙার খেলায় তেঁতে ওঠা জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি বিরোধ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ২৮ জুন দলের জাতীয় সম্মেলন ঘোষণা দিয়েছিলেন জি এম কাদের। এর মধ্যেই জাপায় নতুন নেতৃত্ব গড়ার উদ্যোগ নেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগ সদস্য। বিশেষ করে কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হিসেবে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদপ্রত্যাশী বলে ঘোষণা দেন। সঙ্গে যোগ দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও। এমন পরিস্থিতিতে ভেনু জটিলতায় ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেন জি এম কাদের। এদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলয় ২৮ জুন কাউন্সিল করার ব্যাপারে অনড় থাকলেও শেষ মুহূর্তে তারা পিছু হটেন। তারা চেয়ারম্যানকে দ্রুত সময়ে কাউন্সিল করার আলটিমেটাম দেন। না হলে তারা পাল্টা কাউন্সিল ডেকে নতুন কমিটি করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।