
রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-২। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনে একবার বিএনপি জয় পেলেও বাকি সময়গুলোতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর আগ থেকেই এ আসনে কমতে থাকে তাদের জনপ্রিয়তা। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সুবিধা করতে পারেনি জাপা।
বিএনপি এখন পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা না করলেও তাদের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এর মধ্যে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এম আজিজুল হক, সদস্য সচিব কমল লোহানী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল বকুলের নামও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন ফুরফুরে বিএনপি-জামায়াত। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রাজত্বের উত্থান-পতনের পর আগামী নির্বাচন ঘিরে এ আসনে আশার আলো দেখছে বিএনপি-জামায়াত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও সদ্য কারামুক্ত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আশরাফ আলী এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
রংপুরের জনসভায় এটিএম আজহার-ছবি জাগো নিউজ
এদিকে বিএনপি এখন পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা না করলেও তাদের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এর মধ্যে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এম আজিজুল হক, সদস্য সচিব কমল লোহানী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল বকুলের নামও শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মন্ডল ২০২৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবারও চিন্তাভাবনা করছেন।
জানতে চাইলে আনিছুল ইসলাম মন্ডল বলেন, সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণও স্বতঃস্ফূর্ত হয় তাহলে হয়তো চিন্তা-ভাবনা করে দেখবো।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আমি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর পরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই তো কাজ করতে হবে।
বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আমি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এরপরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই তো কাজ করতে হবে।
অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী এম আজিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এসেছি। এ কারণে সাধারণ মানুষের একটা আলাদা সহানুভূতি আছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের এমপি যা করেছেন তা নিজের আখের গোছাতে করেছেন, এলাকার উন্নয়নে কিছু করেননি।
এদিকে আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির অবস্থা নাজুক থাকায় এবার এই আসনে বিএনপির পক্ষে সাধারণ মানুষসহ ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করছেন অনেকেই।
বদরগঞ্জের কালুপাড়া ইউনিয়নের তরুণ ভোটার মিরাজ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে বিএনপি ও জামায়াত ক্ষমতার বাইরে। এবার তাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে। তবে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হলে তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তরুণ কোনো ভালো প্রার্থী অংশ নিলে ফলাফল পাল্টে যেতে পারে।
এ এলাকা একসময় লাঙ্গলের ছিল। আওয়ামী লীগ থেকেও এমপি হয়েছে। তবে এবার নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের ভোটার ব্যবসায়ী সফিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ এলাকা একসময় লাঙ্গলের ছিল। আওয়ামী লীগ থেকেও এমপি হয়েছে। তবে এবার নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
বদরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কামরুজ্জামান কবির জাগো নিউজকে বলেন, এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেও তিনি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দীর্ঘদিন ভোটের বাইরে থাকলেও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। এবার নির্বাচন ঘিরে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে এবং জয়ের ব্যাপারেও আমরা শতভাগ আশাবাদী।
এদিকে চার দফা দাবিতে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুল মাঠে গত ৪ জুলাই বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। প্রায় দেড় যুগ পর রংপুরে জামায়াতের এ জনসভায় মানুষের ঢল নামে। বিভাগীয় এ জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন ফাঁসির রায় থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে সদ্য কারামুক্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। যাকে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।
সমাবেশে প্রধান বক্তা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারবো, এটা কোনোদিন চিন্তায়ও আসেনি। ফাঁসির মঞ্চ থেকে আজ লাখো জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। এসবই হয়েছে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেও তিনি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দীর্ঘদিন ভোটের বাইরে থাকলেও আমাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। এবার নির্বাচন ঘিরে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে এবং জয়ের ব্যাপারেও আমরা শতভাগ আশাবাদী।
এই সমাবেশের পর রংপুরের সব কটি আসনে জামায়াত বেশ উজ্জীবিত হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিগত নির্বাচনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আনিসুল হক চৌধুরী, ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াস, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের আনিসুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখলে নিয়ে জাতীয় পার্টির কামাল উদ্দিন হায়দার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচএম এরশাদ (উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পরিতোষ চক্রবর্তী) জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এইচএম এরশাদ নির্বাচিত হলেও উপ-নির্বাচনে আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগের আনিসুল হক চৌধুরী। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার জয়লাভ করেন।
পরে জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন সাবেক দুই এমপি পরিতোষ চক্রবর্তী ও মোহাম্মদ আলী সরকার।
২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মন্ডল নির্বাচিত হলেও ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয় পান ডিউক চৌধুরী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৩, পুরুষ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার চারজন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৪ জন। সে অনুযায়ী ভোটার বেড়েছে ২২ হাজার ৮৮৮।