
‘চিপায় পড়ে’ ডিসি-এসপিরা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহীতে জুলাই পথযাত্রা শেষে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ডিসি-এসপিদের বলছি—আপনারা যে ভালো ব্যবহার করছেন, আমরা জানি, আপনারা চিপায় পড়ে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। যদি হাসিনার পতন না হতো, তখন এই ডিসি-এসপিরাই গণভবনেই প্রমোশনের জন্য লাইন ধরত।’
সাংবাদিকদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকদের দেখছি। আমরা সাংবাদিকদের ওপরে নজর রাখছি। এই সাংবাদিকেরাই জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার জন্য লেগেছিল।’
হাসনাত বলেন, ‘এই তরুণ সমাজ আর দালালি করতে চায় না। কারও তাঁবেদার হতে চায় না। তরুণ সমাজ আর স্বৈরাচার হতে চায় না। সুতরাং, যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা জেনে রাখুন, আপনারা এই তরুণ সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এই জেন-জির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দাড়িপাকাওয়ালা মুরব্বিরা ফেইল করেছেন। বাবারা ফেইল করেছেন। তখন সন্তানেরা রাস্তায় নেমে এসেছে।’
হারানোর কিছুই নেই উল্লেখ করে এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা কি জানি না, গত ১৬ বছর আপনাদের ব্যাংক কেমনে ছিল? আপনাদের ব্যবসা কেমনে ছিল? আমরা সব জানি। কারে ভয় দেখান? আমাদের হারানোর কিছুই নাই। আমাদের লুটপাটের ব্যাংক নাই, যেটা আমরা হারাব। আমাদের শুধু আছে ভালোবাসা মানুষের। আমরা সেটার জন্য রাস্তায় এসে আবার আমরা জীবন দেব।’
এনসিপি নেতা বলেন, ‘বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিচ্ছে। আপনাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বেঁচে থাকতে আর বাসা থেকে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে গুম হতে দেওয়া যাবে না। কোনো মায়ের বুক আর খালি হবে না। কোনো ইলিয়াস আর হারিয়ে যাবে না। কোনো দেশপ্রেমিক সাংবাদিককে বিদেশে থাকতে হবে না।’
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যারা প্রশাসনে আছেন, আপনারা যদি ভেবে থাকেন আপনারা ক্ষমতাপন্থী হবেন, আপনারা ভুল করছেন। আপনারা ভুলে যাবেন না, ১৬ বছরের ডিসি-এসপিদের কী পরিণতি হয়েছে। আপনারা ভুলে যাবেন না, এই দিন দিন না, আরও দিন আছে। আমরা আপনাদেরকে বলব না, আপনারা এনসিপিপন্থী হোন, আওয়ামীপন্থী হোন। রাজনীতিপন্থী হওয়ার কী পরিণতি, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে সুযোগ হয়েছে। এই ডিসি-এসপিদের যদি কেউ স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান করে, যদি কেউ মিডনাইট ইলেকশনে সহযোগিতা করে, এই বাংলাদেশে আর তার জায়গা হবে না।’
গোয়েন্দা সংস্থারও সমালোচনা করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বলেন, ‘রাষ্ট্রের এজেন্সিরা যারা রয়েছে, বাংলাদেশের যারা গোয়েন্দা সংস্থা আছে তারা জানে না, বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র হয়। তারা জানে না, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে ফেলতে কী ষড়যন্ত্র হয়। তারা একটি রাজনৈতিক দলকে আরেকটা দলের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। আপনারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আমরা আপনাদেরকেও দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করি নাই। সুতরাং, সংস্কার ছাড়া, বিচার ছাড়া যদি ভোটের চেষ্টা করা হয়, আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গুলি চালিয়ে যেতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই, অবশ্যই চাই। তবে সেটা সংস্কারসহ, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ। আবার দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে, সেটার জন্য আপনারা প্রস্তুতি রাখুন।’
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য চিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।