Image description

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন দেশ শাসন করার পরও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে বাস্তবতা, যে যুক্তিবাদ, তার যে দর্শন সে দর্শনকে আওয়ামী লীগও অস্বীকার করতে পারেনি।

শনিবার (৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনিস্টিউটের সেমিনার হলে আয়োজিত ‘শহীদ জিয়া ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শীর্ষক আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠ’ অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন ড. আব্দুল মঈন খান।

জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মঈন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি শাহীন রেজা ও সঞ্চালনা করেন কবি ড. শহিদ আজাদ।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কবি আল মুজাহিদি। এ সময় তিনি বলেন, যা আমরা আকড়ে রাখি তাতেই আমরা রূপান্তরিত হই। আলোকে আকড়ে ধরলে আলোকিত হওয়া যায়। আর অন্ধকার আকড়ে ধরলে অন্ধকারে পতিত হতে হয়। আমাদের যাত্রা আলোর দিকে। তিমির-অন্ধকার অতিক্রম করে আলোর দিকে আমাদের যাত্রা। স্বাধীনতার আবর্তনের মুহূর্তে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া জাতি, জাতিসত্তা, জাতীয়তা সর্বোপরি লিবার্টি (স্বাধীনতা) এবং সভেরেন্টি (সার্বভৌমত্ব) ধরে রাখতে জাতিকে ডাক দিয়েছিলেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে ড. আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, এদেশে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, হাজং, মুরং, খাসিয়া, রাজবংশী, কোল, ভিল, মুন্ডা, কোচ, লুসাই এবং এরকম সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি উপজাতি রয়েছে। তাহলে আমরা এই দেশে বাস করে আমাদের জাতীয়তাবাদকে যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বলি সেটা কেমন হবে? সেটা কি ঠিক হবে?

তিনি বলেন, সেজন্যই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার সমাধান দিয়েছিলেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে, সুন্দরভাবে। তিনি (জিয়াউর রহমান) বলেছিলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি পুষ্পমাল্যের মত। যে পুষ্পমাল্যে বাঙালি একটি ফুল এবং সে ফুলটি হয়তো আকারে বড় কিন্তু সেই পুষ্পমাল্যের মধ্যে আরও যে ফুলগুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে এই বিভিন্ন উপজাতি। তার সমাহারে যে জাতি সৃষ্টি হয়েছে এবং যে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়েছে তার নাম তিনি করেছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের ভিতরে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে গণতন্ত্রের কবর রচনা করে একদলীয় শাসন বাংলাদেশে কায়েম করেছিল। সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন উৎখাত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

 

জাতীয়তাবাদ নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রধান আলোচক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এ শতকের মধ্যেই বৃহত্তর ভারত একাধিক জাতি-রাষ্ট্রে-খণ্ডে বিখণ্ড হয়ে যাবে। তবে ভারতবাসী কোনোভাবেই বৃহত্তর ভারতের মায়া ত্যাগ করতে পারবে না।

আমারা যতদিন না পর্যন্ত নিজেদের পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করতে পারব ততদিন পর্যন্ত আমাদের সার্বভৌমত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে। বাংলা ভাষার সাথে বাঙালি মুসলামানের যে সম্পর্ক তার মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। আমরা জানি যে বাংলা ভাষা অতি সরল মধুর। কিন্তু এটাও যে কতটা তেজোদ্দীপ্ত হতে পারে তা আমরা বুঝতে পারি যখন প্যারেড গ্রাউন্ডে সেনা কমান্ড দেখি। এটারও কিন্তু প্রবর্তক ছিলেন জিয়াউর রহমান।

এসময় অতিথিরা ‘চেতনায় জাতীয়তাবাদ’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠের আসর বসে। সেখানে জাতীয়তাবাদ ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা রকম কবিতা আবৃত্তি করা হয়।