
রাজশাহীতে ‘মব’ সৃষ্টি নিয়ে দুই ভাই পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে দুজন একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন। প্রমাণ হিসেবে বড় ভাই ছাত্রলীগের নেতার সঙ্গে ছোট ভাইয়ের ছবি দেখিয়েছেন। আর ছোট ভাই দেখিয়েছেন, তার বড় ভাইকে দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র।
সকালে বড় ভাই সংবাদ সম্মেলন করেন নগরের একটি রেস্তোরাঁয়। আর বিকেলে ছোট ভাই করেছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে।
বড় ভাইয়ের নাম মেহেদী হাসান (সিজার) ও তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম মাহমুদ হাসান (শিশিল)। তাঁরা রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের বাবা প্রয়াত মাহবুব আলম রাজশাহীতে একনামে ‘মাহবুব কন্ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত ছিলেন। মাহবুব আলমের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলছে।
ছোট ভাই মাহমুদ হাসান রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। গত বৃহস্পতিবার তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা নগরের পদ্মা পারিজাত এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ওই সময় প্রচার করা হয়, এই ভবনে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি অবস্থান করছেন। পরে ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। এই ফ্ল্যাটে থাকেন বড় ভাই মেহেদী হাসান সিজারের শাশুড়ি হাবিবা আক্তার। সেখানে তল্লাশি চলাকালেই যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনি জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার ডিকোকে ফোন করে বলেন, এত কষ্ট করে লাভ নেই। তিনি আছেন অনেক দূরে। এরপরই যুবলীগের ওই নেতাকে ধরার ওই অভিযান শেষ হয়।
পরে হাবিবা আক্তার অভিযোগ তোলেন, যুবলীগের নেতা ধরতে এই তল্লাশি নয়, তাঁর জামাতা মেহেদী হাসানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তাঁদের ভয় দেখাতে ‘মব’ সৃষ্টি করা হয়েছে। তল্লাশির নামে বাড়িতে চালানো হয়েছে লুটপাট। এ অভিযোগে গত শুক্রবার দুপুরে ছোট ভাই মাহমুদ হাসানসহ কয়েকজনের নামে তিনি নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলাও করেছেন।
এর জের ধরে শনিবার পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়। সকালে সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান সিজার দাবি করেন, তাঁর ভাই বাবার রেখে যাওয়া প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সম্পদ একাই ভোগদখল করছেন। তাঁকে কিছুই দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর বাবার দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও নিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই। একজন দুটি অস্ত্র পাওয়ার কথা না। তারপরও আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ডিও লেটার দিয়েছিলেন মাহমুদ হাসানের পক্ষে। ফলে জেলা প্রশাসন দুটি আগ্নেয়াস্ত্রই তাঁর ছোট ভাইকে দিয়েছে। এ সময় ভাইকে ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ’ প্রমাণ করতে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজীবসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে মাহমুদ হাসানের ছবিও দেখান মেহেদী হাসান সিজার।
বিকেলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ছোট ভাই মাহমুদ হাসান। সেখানে তিনি ভাইয়ের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর বড় ভাই-ই ছাত্রলীগ করতেন। তাঁর ভাই ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তাঁর জন্য সুপারিশ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। এই প্রত্যয়নপত্রে সিজারকে ‘ছাত্রলীগ’ বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রত্যয়নপত্রটি দেখান।
মাহমুদ হাসান দাবি করেন, ‘মব’ সৃষ্টি করে ভয় দেখাতে তাঁরা ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাননি। তাঁরা খবর পান যে ওই বাড়িতে যুবলীগের নেতা অবস্থান করছেন এবং কিছু মানুষ ভবনটি ঘেরাও করেছেন। ‘উত্তেজনা প্রশমিত’ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে তাঁরা সেখানে যান। যাওয়ার পরে তাঁরা জানতে পারেন এটি বড় ভাইয়ের শ্বশুরের ফ্ল্যাট। দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা দাবি করে তিনি দ্রুত সেটি প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ হাসানের সঙ্গে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ফায়সাল সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মীর তারেক, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান, নগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।