Image description

সেগুন কাঠ দিয়ে বানানো হচ্ছে চারটি চেয়ার। এর একটি উচ্চতার কারণে যে কারও নজর কাড়ে। ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার সেই চেয়ারজুড়ে নানা ধরনের কারুকাজ। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে চেয়ারটি বানানো হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গ্রামের একটি আসবাব তৈরির দোকানে। বিএনপির স্থানীয় এক নেতা চেয়ারটি তৈরি করতে দিয়েছেন।

বড় চেয়ারটির সঙ্গে অপর যে তিনটি চেয়ার তৈরি হচ্ছে, এর প্রতিটির উচ্চতা আড়াই ফুটের মতো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানানো হচ্ছে এ তিনটি চেয়ার। এসব চেয়ার যিনি তৈরি করতে দিয়েছেন, তাঁর নাম জয়নাল আবেদীন। তিনি স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।

সম্প্রতি থাইংখালীর আসবাব তৈরির দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার চারটি তৈরিতে কারিগরেরা কাজ করছেন। তাঁরা জানান, বড় চেয়ারটি তৈরিতে কাঠ লেগেছে ১৮ ফুট। প্রতি ফুট কাঠের দাম পাঁচ হাজার টাকা। কাঠের মূল্যসহ চেয়ারটি তৈরিতে খরচ হচ্ছে চার লাখ টাকার বেশি। অন্যদিকে আড়াই ফুট উচ্চতার তিনটি চেয়ারের প্রতিটিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে। এসব চেয়ারও সেগুন কাঠের। সাত কারিগর চেয়ার তৈরিতে কাজ করেছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসা তিন কারিগর চেয়ারের কারুকাজ করছেন। কারিগরেরা বলেন, চেয়ারের কারুকাজ করতেই প্রায় ছয় মাস সময় লেগে যাচ্ছে। কিছুদিন পর রঙের কাজ শুরু হবে।

তখন আমি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার নেত্রীসহ দলের কয়েকজন প্রিয় নেতাকে রাজকীয় চেয়ার বানিয়ে উপহার দেব। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে আমার দোকান বন্ধ হয়ে গেলেও সেই সিদ্ধান্তের কথা ভুলিনি।
জয়নাল আবেদীন, সভাপতি, পালংখালী ওয়ার্ড, উখিয়া

এলাকায় কথা হয় বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি জানান, থাইংখালী বাজারে তাঁর একটি আসবাব তৈরির দোকান ছিল। সেটি ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। দোকানটি চালু থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দেখতে উখিয়ায় আসেন। এ সময় জয়নাল তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তখনই খালেদা জিয়াকে একটি চেয়ার উপহার দেওয়ার কথা মাথায় আসে।

জয়নাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন আমি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার নেত্রীসহ দলের কয়েকজন প্রিয় নেতাকে রাজকীয় চেয়ার বানিয়ে উপহার দেব। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে আমার দোকান বন্ধ হয়ে গেলেও সেই সিদ্ধান্তের কথা ভুলিনি।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার নেতাকে উপহার দেওয়ার জন্য বানানো হচ্ছে এই চারটি চেয়ার। আগামী আগস্ট মাসে চেয়ারগুলো ট্রাকে তুলে ঢাকার উদ্দেশে পাঠাতে চান জয়নাল। সম্প্রতি তোলা
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার নেতাকে উপহার দেওয়ার জন্য বানানো হচ্ছে এই চারটি চেয়ার। আগামী আগস্ট মাসে চেয়ারগুলো ট্রাকে তুলে ঢাকার উদ্দেশে পাঠাতে চান জয়নাল। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

২০১৮ সাল থেকেই চারটি চেয়ার তৈরির জন্য সেগুন কাঠ সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘কাঠ সংগ্রহ করে থাইংখালী বাজারের সাইফুল ইসলামের ফার্নিচারের দোকানে মজুত করতে থাকি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চেয়ার তৈরির কাজ শুরু হয়। এখন চেয়ারগুলো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।’

আগামী আগস্টে চেয়ারগুলো ট্রাকে তুলে ঢাকার উদ্দেশে পাঠাতে চান জয়নাল। তাঁর আশা, খালেদা জিয়া অবশ্যই তাঁর উপহার গ্রহণ করবেন। তবে খালেদা জিয়া এই উপহার না নিলে কী করবেন জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, ‘তখন তো ফেরত নিয়ে আসা ছাড়া কিছু করার নেই। তবে এই চেয়ার আমি বিক্রি করব না। ঘরে সংরক্ষণ করব।’

জয়নাল আবেদীনের বাড়ি পালংখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের থাইংখালী বাজারের পাশে হাকিমপাড়ায়। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে তাঁর। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অন্য সন্তানেরা পড়াশোনা করছে। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি গরুর খামার করেন। জয়নাল জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি ১২টি মামলার আসামি হয়ে কারাভোগ করেছেন।

জয়নাল আবেদীনের বাড়ি পালংখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের থাইংখালী বাজারের পাশে হাকিমপাড়ায়। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে তাঁর। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অন্য সন্তানেরা পড়াশোনা করছে। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি গরুর খামার করেন।

জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, জয়নাল আবেদীন দলের একজন ত্যাগী নেতা। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি এক ডজন মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। ভালোবাসা থেকেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের জন্য জয়নাল চেয়ারগুলো বানাচ্ছেন।