
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পাটগ্রামে কী হয়েছে, কী হচ্ছে আপনারা তা দেখতে পাচ্ছেন। শুধু পাটগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশকে এখন পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে একটি দল। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা ওই সংস্কার আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।
গতকাল শুক্রবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরী ও জেলার উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় ডা. শফিকুর এসব কথা বলেন। জনসভা আয়োজিত হয় চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের খুনিসহ ফ্যাসিস্টদের বিচার, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক সংস্কার ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে। জনসভায় অংশ নেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও বড় ভাই রমজান আলীও।
জামায়াত আমির বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আদলে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন আমরা বলব সেই স্বপ্নকে আমরা দুঃস্বপ্নে পরিণত করে ছাড়ব। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনকে ক্যু করতে দেওয়া হবে না। কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।
সম্প্রতি দেশজুড়ে উচ্ছৃঙ্খল জনতার বাড়াবাড়িতে অতিষ্ঠ জনগণ। এ বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে মব কোনো নতুন কালচার নয়। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে মব চলছে। নারীদের নির্যাতন করে তাদের অঙ্গ কেটে মালা বানিয়ে যারা গালায় ঝুলিয়েছিল, তারা এখনো জীবিত রয়েছে। জীবন্ত মানুষকে ব্লেড দিয়ে কুচিয়ে কুচিয়ে ক্যামেরার সামনে হত্যা করা হয়েছে সেগুলো কি মব ছিল না? সেগুলো সব ছিল মব। কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।
সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর বলেন, শহীদ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা যেন মহান আল্লাহ গ্রহণ করেন। যে রাষ্ট্র স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না সেই রাষ্ট্র কখনো কাউকে শাসন করার অধিকার রাখে না। জুলাই-আগস্টের আহতদের এখনো অনেকে চিকিৎসা করতে পারছে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়। তাদের বিচার যদি হয়, তাহলে কোনো দল জনগণের ওপর এ ধরনের নোংরা হামলা চালানোর সাহস পাবে না। আর যদি বিচার না হয় তাহলে অবিচারের সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ একটা জঙ্গলে পরিণত হবে।
ডা. শফিকুর বলেন, জামায়াতের তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম সর্বপ্রথম এই জাতির সামনে কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্থা উপস্থাপন করেছিলেন। যার ভিত্তিতে ১৯৯১ সালে একটা নির্বাচন হয়েছিল। পরপর আরো দুই-তিনটি নির্বাচন হয়েছিল। তারপর থেকে কেয়ার টেকার সরকারকে খেয়ে ফেলা হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, সাড়ে ১৫ বছরে আমাদের অনেক নেতাকে গুম করা হয়েছে। দুজন আমির, দুজন নায়েবে আমির, দুজন এক্স জেনারেল সেক্রেটারি, একজন নির্বাহী পরিষদের সদস্য, এরকম করে একের পর এক মাথা থেকে শুরু করে ১১ জন নেতাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতারা ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছিলেন হাসতে হাসতে। কারণ তারা জানেন, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেটি পুরোপুরি মিথ্যা। এটিএম আজারুল ইসলাম ভাইয়ের মামলা দিয়েই সেটি প্রমাণ হয়েছে। এটা আসলেই মিথ্যা। আমাদের নেতারা যদি বেঁচে থাকতেন আদালতের আশ্রয় নিতাম। আমরা নিশ্চিত প্রতিটিতে ন্যায় বিচার পেতাম।
জনসভায় সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারব এটা কোনো সময় চিন্তায় আসেনি। আমি কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। মহান আল্লাহ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবেন তিনিই ছাড়া কেউ জানতেন না। আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লাখো জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি আল্লাহর রহমত। যে গলায় রশি থাকার কথা ছিল সেই গলায় আপনারা মালা পরিয়েছেন। আমার মামলায় যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারাও পরে বলেছে তাদের জোরজুলুম করে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কারো প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই।
জামায়েতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন সাবেক এমপি ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পারওয়ার, সাবেক এমপি ও নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।