
মুরাদনগরের ঘটনার একাধিক ভিডিও দেখলাম। ভিকটিম, তার প্রতিবেশি, স্থানীয় সাংবাদিক এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এরকম বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা বললাম এবং তাদের রেকর্ডেড ইন্টারভিউ শুনলাম। পুলিশের অফ দ্য রেকর্ড এবং অন দ্য রেকর্ড বক্তব্যও শুনলাম।
ঘটনাটা বেশ কমপ্লেক্স।
স্থানীয় প্রভাবশালী ও সম্পদশালী দুই যুবক ভাই, স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব, অভিযুক্ত যুবকের আগেও অপরাধে জড়িত থাকার ইতিহাস, প্রবাসীর স্ত্রী, প্রভাবশালী যুবকদ্বয়ের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ, সংখ্যালঘু, নারী এবং ঋণগ্রহীতা হিসেবে তার ভালনারেবল পজিশনে থাকা, ওই নারীকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব-সন্দেহ, বড় ভাইকে ঘটনাস্থলে মারধরে ছোটভাই ও তার লোকজনের অংশ নেয়া, দেরিতে ধর্ষণের মামলা করা-- সব মিলিয়েই ঘটনাটা বেশ জঠিল। এখানে আরও অনেক তথ্য প্রমাণ ছাড়া পুরো ঘটনায় কী ঘটেছিল সে বিষয়ে উপসংহার টানা সমস্যাজনক।
তবে ঘটনার লম্বা ব্যাকগ্রাউন্ড যা-ই থাকুক এখানে হিন্দু ওই নারী-ই মূল ভিকটিম তা স্পষ্ট। তার স্বামী প্রবাসে থাকা, নিজের ধর্মীয় পরিচয় এবং স্থানীয় সম্পদশালী ও প্রভাশালী যুবকদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের ঘটনাগুলো তাকে ভালনারেবল করে তুলেছে। ভিডিওগুলো এবং ভিকটিমসহ নানান জনের সাক্ষাতকার থেকে ওই দিনের ঘটনাকে এক কথায় 'ধর্ষণ' বলার মতো যথেষ্ট উপাদান পাওয়া যাচ্ছে না। আবার 'ধর্ষণ না' বা 'পরকীয় ছিল' সেটাও ডেফিনেটিভলি বলার মতো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উভয়ক্ষেত্রেই পক্ষে বিপক্ষে কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আরও তদন্ত প্রয়োজন।
ওই দিনের ঘটনা যদি 'ধর্ষণ' নাও হয়ে থাকে তাহলেও এটা স্পষ্ট যে, ওই নারী ওই এক অথবা দুই ভাইয়ের দ্বারা ম্যানিপুলেটেড সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য হয়েছেন, যেখানে তিনি আসলে ভিকটিম।
তবে এই ঘটনায় মিডিয়ার রিপোর্টিং যথাযথ ছিল না। শুধু মামলার বরাতে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাটিকে যথেষ্ট প্রমাণাদি ছাড়া 'ধর্ষণ' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হলেও এখানে অন্যান্য যেসব ফ্যাক্টর রয়েছে সেগুলোর কিছুই মূলধারার মিডিয়ায় আসেনি।
পাশপাশি একজন সংখ্যালঘু নারীর ভিকটিম হওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানিয়ে একেকপক্ষ একেকভাবে ফায়দা নেয়ার চেষ্টাও সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে গতকাল থেকে।
কদরুদ্দিন শিশির