Image description
 

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী জোট করা নিয়ে ইতিবাচক বিএনপি। তবে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেনি দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য শরিক দলগুলোর প্রস্তুতি রাখতে বলছে বিএনপি। লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। লন্ডনে দুই নেতার আলোচনার বিষয় জানাতে গত কয়েক দিন ধরে শরিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে নির্বাচনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বিএনপির তরফ থেকে।

গত বৃহস্পতিবার গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে নির্বাচনী জোট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখনও আমরা ওই পর্যায়ে আসি নাই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে এই প্রক্রিয়া আসবে। আমরা সেই জায়গায় এখনও আসি নাই। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে তখন সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হবে।’

Kiswan

বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকের বিষয়গুলো যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে জানাচ্ছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে দিনক্ষণের একটা মোটামুটি ঘোষণা আসছে। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব। এখানে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড আছে, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিছু কর্মকাণ্ড আছে। তাছাড়া আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। বিগত দিনে আন্দোলনে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আগামী দিনগুলোতেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন। মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে এক ধরনের বোঝাপড়া বা যে সমঝোতা হলো তা জানালেন। সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল সেটা খানিকটা অবসান হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনী সমঝোতা, জোট বা আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপি বলার চেষ্টা করলেন যে যুগপৎভাবে আন্দোলনে আমরা ছিলাম তাদের সঙ্গে নির্বাচন ও সরকার গঠনের বিষয়ে বোঝাপড়ার জায়গাটা আরও বাড়িয়ে তুলতে চান। নির্বাচনের জোট, মঞ্চ বা প্লাটফর্ম হবে কি না তা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে এ বিষয় নিয়ে আরো কথাবার্তা, আলোচনা হবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক হয়েছে সেই বৈঠক বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করলেন। এ ছাড়াও রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচনের জোট বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচন এগিয়ে এলে আলোচনা হতে পারে। দেশ, জাতির ও জনগণের স্বার্থে অতীতে যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম আগামীতেও যেন ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পারি।’

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে কৌশলে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আসন চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন তারা। এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি করছেন সুধী সমাবেশ, অব্যাহত রেখেছেন প্রাথমিক গণসংযোগ কর্মসূচিও। গত রবিবার যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। সোমবার গণফোরাম ও এনডিএমের সঙ্গে বৈঠক ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। সামনে এ নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আরও বৈঠক করার কথা রয়েছে।

দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী জোট নিয়ে ভাবছে বিএনপি। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারে দলটি। এখনও আলোচনা শুরু না হলেও আগামী দু-এক মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আগ্রহীদের জোটে টানার চেষ্টা করবে বিএনপি। এ ছাড়া যুগপতের বাইরে থাকা অন্যান্য দলকেও গুরুত্ব দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদেরকেও নির্বাচনী জোটে নিতে পারে বিএনপি।

বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ৪০টির মতো রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত ছিল। এগুলোর মধ্যে ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১০ দলীয় জোট জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম-বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিএম অন্যতম। বিএনপি আন্দোলনের এসব মিত্রদের জন্য ‘যৌক্তিক’ আসন ছাড়বে। যাদের জাতীয় ইমেজ আছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাদের বিজয়ী হওয়ার মতো অবস্থান আছে, তাদেরকে আসন ছাড়বে। এ ছাড়া প্রার্থী দুর্বল হলেও জোটের ঐক্যের স্বার্থেও মিত্রদের কিছু আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচনী জোটে জামায়াতে ইসলামী ছিল এবং তাদেরকে তখন ২২টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল দলটি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করতে পারে, সেক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটে থাকছে না জামায়াত। ফলে দলটিকে এবার আর কোনো আসন দেওয়ার আলোচনা আসছে না। এদিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনী জোটে না থাকলেও পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নতুন কয়েকটি দল সম্পৃক্ত হয়। জোটে এলে তাদের মধ্য থেকেও কাউকে কাউকে আসন দেওয়া হতে পারে। বিএনপি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিলেও সব মিলিয়ে এবার আসন ছাড়ার সংখ্যা ৫০টিরও কম হবে বলে জানা গেছে।