
আনজুম হত্যা মামলাকে প্রভাবিত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল জালিমের পক্ষ নিয়েছে, যদি তাই হয় আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের নিয়ে আমরা জালেমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবো বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির নাফিজা জান্নাত আনজুমের কবর জিয়ারত শেষে এসব কথা বলেন। শহীদের বাড়িতে এসে মেয়েটির বাবা খালিক মিয়ার সঙ্গে কথা বলেন জামায়াত আমির। এরপর আনজুমের বাড়ির পাশের দাউদপুর জামে মসজিদের পশ্চিমে সবুজে ঘেরা কবরস্থানে কবর জিয়ারত করেন । সেখানেই এবং উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন।
এ সময় মর্মবেদনায় কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, এ নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে আমরা কোন সমাজে বাস করছি? এই নিষ্পাপ মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার পরিবারের ওপর যে জুলুম চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
শোকগ্রস্ত আঙিনায় দাঁড়িয়ে শত শত মানুষের সামনে আনজুম হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। জনতা স্লোগান দেন— ‘আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে।’ আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আমরা এর বিচার চাই। কোনোভাবেই খুনিকে রক্ষা করা যাবে না। যদি মামলাটি প্রভাবিত করে খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জালেমদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও তার কথা হয়েছে এবং তিনি প্রশাসনকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করেছেন যে, ‘খুনিকে বাঁচাতে কোনো রকম চালাকি সহ্য করা হবে না। পুলিশের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে চলে, তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন। এই মজলুম পরিবারকে সহযোগিতা করলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে।’
পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার চোখে জল আসে এই কল্পনা করেই—যদি এই মেয়ে আমার মেয়ে হতো, তাহলে আমি কেমন অনুভব করতাম?
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, এই মেয়ে যদি আমার মেয়ে হতো তাহলে আমার কেমন লাগতো। প্লিজ ভাই আজকে আপনারা সেক্রিফাইস করেন। আমি আজকে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিনা বলে দুঃখিত।’
এর আগে, গত ১২ জুন সকাল ৭টার দিকে শিক্ষার্থী আনজুম পার্শ্ববর্তী সিংগুর গ্রামে কোচিং করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। সে ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে ও শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। নিখোঁজের দুদিন পর ১৪ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির পাশের ছড়ার পাড়ে দুর্গন্ধ পেয়ে ভুক্তভোগীর ভাই ও মামা তার অর্ধগলিত মরদেহ খুঁজে পান।
এ ঘটনায় আনজুমের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ এ ঘটনায় পার্শ্ববর্তী দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহির মিয়ার ছেলে জুনেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।
এদিকে অভিযুক্ত জুনেল মিয়া পুলিশের কাছে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এ নিয়ে নিহতের পরিবার, আনজুমের সহপাঠী ও এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘাতক জুনেলকে দ্রুত বিচার ট্র্যাইবুনালে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি এলাকাবাসীর।