
১২ দিনের যুদ্ধ। চারদিকে ভয় আর আতঙ্ক। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তেহরান ছাড়েন পরিবারের কর্তারা। দম বন্ধ করা একটা সময় পার করেছেন তেহরানের প্রায় ২ কোটি মানুষ। তবে যুদ্ধবিরতির পর সে চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। আনন্দ উল্লাস নিয়ে বাসে, ট্রেনে চেপে প্রিয় নগরী তেহরানে ফিরে আসছেন তারা। এ যেন স্বর্গীয় এক অনুভূতি। ফিরে আসা নাগরিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, ফের নিজ বাসার বিছানায় শোয়া যাবে- এমন অনুভূতি তাদের বেশ আনন্দ দিচ্ছে। অবশ্য এই আনন্দের পেছনে অন্য কারণও আছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, এই যুদ্ধে তারাই বিজয় হয়েছে। ইহুদিবাদীদের চরম পরাজয় হয়েছে। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মুখে কঠিন চপেটাঘাত দিতে পেরেছে ইরান। সর্বোচ্চ নেতার এমন অভিব্যক্তি যেন ইরানিদের মনে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে। নিরঙ্কুশ বিজয় না পেলেও টিকে রয়েছে এটাই ইরানের জন্য বিশাল খবর। কেননা, সারা দুনিয়া দেখেছে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ইসরাইল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে কীভাবে নিঃসঙ্গ লড়াই চালিয়েছে ইরান। অবশ্য এই ১২ দিনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আয়াতুল্লাহ খামেনির দেশ। একাধিক সামরিক ব্যক্তিসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরমাণুবিজ্ঞানীদের হারিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইরানের বেশ সময় পার করতে হবে। এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ শনিবার জানাজা হওয়ার কথা আছে। এর মাধ্যমে জাতীয় বীরদের শেষ বিদায় জানাবে দেশটির হাজার হাজার মানুষ। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে থাকায় জানাজায় কে ইমামতি করবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বলাবলি আছে জানাজাকে লক্ষ্য করে তার আগমন হতে পারে।
তেহরানে ফেরা বাসিন্দাদের অনুভূতি তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। ৩৩ বছর বয়সী নিকা নামের এক নারী গণমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, নিজ বাসস্থানে ফিরতে পেরে নিজের মধ্যে স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে। কেননা, তার বাড়িই বছরের পর বছর ধরে তাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। তেহরানের এই বাসিন্দা পেশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বামীর সঙ্গে জানজানে চলে গিয়েছিলেন এই নারী। যেটি তেহরান থেকে ২৮৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।
১৩ই জুন আকস্মিকভাবে তেহরানে হামলা করে ইসরাইল। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান। এর মধ্যদিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশ। গাঢ়ো এক আতঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন তেহরানবাসী। এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের তেহরান খালি করার ঘোষণা দিলে সে আতঙ্ক কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কোনোরকম প্রাণ নিয়ে তেহরান ছাড়তে শুরু করেন তারা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল এই যুদ্ধ রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে। এর বাস্তবতাও ছিল। কেননা, তীব্র সংঘাতের মধ্যে হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ ছিল বেশ আতঙ্কের। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। অনেকেই বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের জনগণকে যেকোনো সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর যুদ্ধ থামানোর উদ্যেগ নেন ট্রাম্প। এ ছাড়া ইসরাইলের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ছিল অকল্পনীয়। ইতিহাসবিদরা বলেছেন, গত ৫২ বছরে এমন ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়নি ইসরাইল। তারাও চাইছিল যুদ্ধটা যেন আর দীর্ঘ না হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে তেল আবিব। এক পর্যায়ে নানা নাটকীয়তার পর যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হয় ইরান ও ইসরাইল।