Image description
বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে ২৩ প্রস্তাব

বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো ২৩ প্রস্তাবের মধ্যে আটটিতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বাকি ১৫টিতে তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। কমিশন তাদের রিপোর্টে এ তথ্য তুলে ধরেছে। এখন কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর চলছে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর ফলে আরও কিছু বিষয়ে হয়তো দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে। যে আট বিষয়ের ওপর দলগুলো একমত হতে পেরেছে সেগুলো হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকরভাবে পৃথক্করণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা। বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার জন্য সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করার সুপারিশের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে সব দল। বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেব বিবেচনা করে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট ও জেলা ইউনিটের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবে দলগুলো নীতিগতভাবে বা আংশিকভাবে একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কোনো কোনো দল প্রবীণতম তিনজন বিচারকের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা সাতজন নির্ধারণ এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা মোতাবেক সময়ে সময়ে আপিল এবং হাই কোর্ট বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক সাবেক বিচারপতিদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ, শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সতর্ক করা ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারপতি পদবি ব্যবহার থেকে বিরত করার সুপারিশের সঙ্গে সব দল নীতিগত একমত পোষণ করেছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন ক্ষমা প্রদর্শন বোর্ড স্থাপন এবং বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দি ত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শন করার সুপারিশের বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে একটি-দুটি দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। আইনগত সহায়তাকে অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের সুপারিশে সব দল একমত পোষণ করেছে। বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে দলগুলোর পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে বলে জানায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রসঙ্গে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনজীবী সমিতি নির্বাচন এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবং নির্বাচন পরিচালনায় দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিলোপের জন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের যে কোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রস্তাবের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। কোনো কোনো দল আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

দলগুলোর মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে’র মধ্যে মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রথম পর্বের বৈঠকগুলো ছিল অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ। আলোচনার সময় বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। আলোচনাকালে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হয়। অনেক বিষয় দলগুলো নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার পর এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় তাদের মতামত জানাবে বলে অবহিত করে।