
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশে নির্বাচনি তৎপরতা জোরেশোরে শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা কেটে গেছে। বৈঠকে নির্বাচনি বার্তা পাওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসন গোছাতে মনোনিবেশ করেছেন। তারা বলছেন, পুরো দেশ রাতারাতি নির্বাচনি ট্রেনে উঠে পড়েছে। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী নির্বাচনমুখী সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অভূতপূর্ব এই নির্বাচনি উৎসবে যোগ দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। এ ছাড়া আসন ভাগাভাগিসহ পর্দার আড়ালে নির্বাচনি নানা হিসাবনিকাশ ও সমঝোতার আলাপ সেরে নিতে অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাজই হচ্ছে নির্বাচনি প্রস্তুতি। নির্বাচনি প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রার্থী বাছাই শুরু হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, এরপরে আমরা মনোনয়নপত্র নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাব। দলটির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, বৈঠকের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়াশা দূর হয়েছে। দেশবাসী এখন নির্বাচনি আমেজে রয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লন্ডন বৈঠকের পর ‘রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে’- এমন বক্তব্যে প্রার্থীরা এলাকায় যোগাযোগ আরও বাড়িয়েছেন। বিএনপির মিত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকা নড়াইল-২ আসনে ইতোমধ্যে হাটবাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করে চলছি। তবে লন্ডনে বৈঠকের পর থেকে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু তার আসনই নয়, গোটা দেশে এখন নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচন। বলতে পারেন নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘মাসে ১৫ দিনই এলাকায় থাকি। এখন আরও বেশি থাকব। পুরো সময়টাই নির্বাচনের মাঠ গোছানোর কাজে ব্যয় করব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনীতিতে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আপাতত সেটা নিরসন হয়েছে। একটা বড় দলের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হওয়ায় এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। পাশাপাশি ওই বৈঠককে ইতিবাচক বলছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। এভাবেই বৃহত্তর ঐক্য ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। সে কারণে নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এদিকে লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা ইস্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছুটা ক্ষুব্ধ ও বিরক্তি প্রকাশ করলেও নির্বাচনি প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রায় ৩০০ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এনসিপি ঈদের আগে থেকেই সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এখন দলটি কমিটি গোছানোয় মনোনিবেশ করছে। নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। এলডিপির নির্বাচনি প্রস্তুতি থাকলেও তারা সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপির সঙ্গে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে।
গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং গণঅধিকার পরিষদ দলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটের আগে বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য হলে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা প্রার্থী দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ আস্তে আস্তে শুরু এবং কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দিয়েছি। জোটগতভাবে না কি সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। নির্বাচন এগিয়ে এলে আলোচনা হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, অনেক দিন ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। এখন জোটগতভাবে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব কি না, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, দলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, চেষ্টা করব সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপির সঙ্গে মিলেই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দলটি। এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিজেদের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনটির নেতারা নিজ নিজ দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়বেন। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে হেফাজতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতো করে নির্বাচনে অংশ নেবে।