Image description
 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গসংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ, এ সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আগেই দিয়েছে সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দেশকে অস্থিতিশীল করতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের নামে মাসব্যাপী কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নবিদ্ধ করতে র‌্যাব-পুলিশের পোশাকে ছিনতাই-ডাকাতি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ও ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার বিচার বন্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগর ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গভীর রাতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং স্বল্প পরিসরে একত্রিত হয়ে ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ কর্মসূচি পালনে নির্ধারিত তারিখ ২৩ জুনের আগে ও পরে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য কর্মসূচি শেষে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলের গুপ্ত কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীদের।

আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এমন পরিকল্পনার তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক নাগরিকজীবন সংঘাতে ঠেলে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ নানা ফিকির খুঁজছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এমন ফন্দি আঁটলেও সব তথ্যই রাখছেন সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাদের ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। এ সময়ে তারা বিভিন্নভাবে একত্রিত হয়ে স্বল্প সময়ের মিছিল করে আবার বিচ্ছিন্নভাবে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাবে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের পদত্যাগ ও ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে ক্রমাগত কর্মসূচি চালাবে বলেও জানা যায়।

মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মাসব্যাপী দলটির কর্মসূচির মধ্যে আজ সোমবার সরকারের পদত্যাগ ও ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত সব থানায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল হবে বলে জানা যায়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার গুপ্তবার্তা ছড়ানো হয়েছে। ২৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ট্রাইব্যুনালে বিচার বন্ধের দাবিতে বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলের কথা বলা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই রয়েছে সব জেলার সাংগঠনিক কার্যালয়কেন্দ্রিক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল। ১৬ জুলাই উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল।

রাজধানীতে যে স্থানগুলো নির্দিষ্ট : শেরেবাংলা নগর থানাধীন মেট্রোরেল স্টেশন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, খেজুর বাগান, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ও শুক্রাবাদ এলাকায় ঝটিকা মিছিল। এ ছাড়া ধানম-ি ৩২ ও ২৭ এবং কলাবাগানসংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর বসিলা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকা, পল্লবী মেট্রোরেল স্টেশনসংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর থেকে বনানী মধ্যবর্তী ফাঁকা যেকোনো জায়গায় এবং মিরপুর কলেজসংলগ্ন এলাকায় কার্যক্রম-নিষিদ্ধ দলটি বিক্ষোভ মিছিল করতে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

আইনশৃঙ্খলা নস্যাতে ছদ্মবেশে ছিনতাই-ডাকাতি : গোয়েন্দা-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলছেন, বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছদ্মবেশে ছিনতাই-ডাকাতি করে দলটির একশ্রেণির গুপ্ত জঙ্গি। আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন রাজধানী ঢাকাসহ সন্নিহিত এলাকায় অবস্থান করছে। তারা উদ্বেগ-আতঙ্ক সৃষ্টিতে প্রায়ই ছোট-বড় ঘটনা তৈরি করে ওই স্থান থেকে চলে যায়। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পড়তে হয় প্রশ্নের মুখে।

গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন পেশায় আ.লীগ নেতাকর্মীরা : গত বছর ৫ আগস্টের পর শীর্ষনেতাদের অধিকাংশ বিদেশে গেলেও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা হয়েছেন এলাকা ছাড়া। তারা এখন নিজ নিজ জেলা বা এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বিশেষ করে ঢাকায় রয়েছে আত্মগোপনে। বিভিন্ন পেশায় জড়িয়েছে তারা। সুযোগবুঝে মিছিল-মিটিং করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে রাতের আঁধারে বা ভোরবেলায় ঝটিকা মিছিল করে তারা। আবার ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ও ছবি আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আপলোড দেয় এবং দেশ-বিদেশে পলাতক নেতাকর্মী তা শেয়ার করে এবং শেখ হাসিনা খুব শিগগির দেশে ফিরে ক্ষমতায় বসবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করে।

কর্মসূচির নিয়ে যা বলল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পরিকল্পনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তারা যেকোনো কর্মসূচি করলে তা অবৈধ। আর এই দলটির যেকোনো কর্মসূচির বিরুদ্ধে ডিএমপির সব ইউনিট তৎপর রয়েছে। ঝটিকা মিছিল বা যেকোনো কর্মসূচি করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ইতিমধ্যে এ ধরনের কর্মসূচিকেন্দ্রিক গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মসূচিতে যেহেতু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এ ধরনের কর্মসূচির বিষয়ে র‌্যাব তৎপর রয়েছে।